সাইকোলজি

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স কি? কিভাবে আপনার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বৃদ্ধি করবেন

আপনি কর্মক্ষেত্র তথা ব্যক্তিগত জীবনে কতটা দূরদর্শী পদক্ষেপ নিতে পারছেন এবং আকস্মিক বিভিন্ন ঘটনায় নিজেকে কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন, এই বিষয় গুলোর উপর আপনার সফলতা অনেকাংশেই নির্ভর করে। সুস্থ ও স্বাভাবিক অবস্থায় প্রায় প্রতিটা মানুষেরই সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা থাকলেও, আবেগ, রাগ, ও বিভিন্ন মানসিক অবস্থার কারণে তা ব্যাহত হতে পারে। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এমন একটি বিষয় যা আপনাকে, বিভিন্ন মানসিক অবস্থাতেও শান্ত এবং বিচক্ষণ রাখতে পারে৷ আর এই আর্টিকেলে আমরা জানব ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স কি এবং কিভাবে আপনার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বাড়াবেন।

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স কি?

Emotional intelligence কে সংক্ষেপে EQ ও বলা হয়। সহজ ভাবে বলতে গেলে, Emotional intelligence হচ্ছে আপনার এমন দক্ষতা যা দ্বারা আপনি নিজের এবং আশেপাশের মানুষদের আবেগ বুঝতে পারেন। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স সমৃদ্ধ মানুষ শুধু মাত্র আবেগই বুঝতে পারেন না বরং তা ইতিবাচক ভাবে ব্যবহার করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারেন।

১৯৯৫ সালের আগেও এই Emotional intelligence বিষয়টি নিয়ে এতটা চর্চা হতো না কিন্তু যখন ১৯৯৫ সালে সাংবাদিক ড্যানিয়েল গোলম্যানের লেখা Emotional Intelligence বইটি প্রকাশিত হয় তখন থেকেই ধারণাটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা এবং গুরুত্ব পায়।

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এর গুরুত্ব

জীবনের প্রায় প্রতিটা ক্ষেত্রেই ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এর গুরুত্ব অনেক সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না, তবে বর্তমান বিশ্বে প্রফেশনাল লাইফে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স কে অন্যতম স্কিল হিসেবে বিবেচনা করা হয়৷ বড় বড় কোম্পানির বিভিন্ন রিপোর্ট বলছে প্রতিষ্ঠানের নিম্ন পর্যায়ে কাজ করা ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স সমৃদ্ধ ব্যক্তিরা প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা, বিক্রয় তথা ওভারঅল বৃদ্ধিতে ব্যাপক অবদান রাখছে। এবং খুব তাড়াতাড়ি নিজেদেরকে উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাচ্ছে। সুতরাং বলা যায় প্রফেশনাল লাইফ অথবা কর্মক্ষেত্রে নিজেকে এগিয়ে রাখতে সাহায্য করতে পারে এই ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স।

কিভাবে নিজের মধ্যে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বাড়াবেন

প্রতিটি মানুষ নির্দিষ্ট কিছু বিশেষ গুণ নিয়ে জন্মগ্রহণ করলেও বাদ বাকী গুণাবলি, শিক্ষা ও চর্চার মধ্যমে অর্জন করতে হয়। আপনার মধ্যে শুরু থেকেই ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স থাকতে পারে তবে যদি সেটার সঠিক চর্চা না হয় তাহলে আপনি স্বাভাবিক ভাবেই এই বিশেষ স্কিল থেকে সুবিধা নিতে পারবেন না। এই পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব একজন সাধারণ মানুষ হিসেবে নিজের ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স কিভাবে বাড়াবেন।

অন্যকে বলার সুযোগ দিন এবং মনোযোগ দিয়ে শুনুন

আপনার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বাড়তে হলে, প্রথমে নিজেকে যেকোনো বিষয় বুঝার সময় দিতে হবে। কোন কনভারসেশনে যখন কেউ কথা বলবে, তখন তার কথার মাঝে কথা না বলে, তাকে শেষ করার সময় দিন। এবং এই সময়টিতে সে কি কি বলছে তা মাথায় রাখুন। তার কথার জবাব কি হবে এই সময়ের মধ্যে ভাবুন এবং উপযুক্ত জবাবটি নির্ধারণ করুন।

তারাহুরো করা যাবে না। তারাহুরো করতে গিয়ে আপনি এমন কোন কথা বলে ফেলতে পারেন যার জন্য পরবর্তীতে আপনাকে অনুতপ্ত হতে হবে।

আকস্মিক ঘটনায় নিজেকে শান্ত রাখুন

হটাৎ ঘটে যাওয়া কোন ঘটনায় বিচলিত হয়ে যাওয়া, কারো কথায় রেগে যাওয়া, স্বাভাবিক মানুষের লক্ষণ কিন্তু আপনি যখন নিজের মধ্যে ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বাড়াতে চাইবেন তখন এই ধরণের কাজ করা যাবে না। আপনাকে জানতে হবে বিরূপ পরিস্থিতিতেও কিভাবে নিজেকে ঠাণ্ডা রাখতে হয়।

রাগের মথায় এবং অতিরিক্ত আবেগের সময় কোন সিদ্ধান্ত নিতে যাবেন না। ইমোশনালি কোন সিদ্ধান্ত নিলে এটি পরবর্তীতে বড় সমস্যা তৈরি করতে পারে। তাই এমন কোন ঘটনায় আপনার প্রথম কাজ হবে নিজেকে শান্ত করা এবং ১০-২০ মিনিট একা বসে বিষয়টি নিয়ে ভাবা।

আত্মবিশ্বাসী হোন

আপনি যদি ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স নিজের মধ্যে অর্জন করতে চান তাহলে আপনাকে নিজের প্রতি বিশ্বাসী হতে হবে৷ নিজেকে নিজে মোটিভেশান দিন এবং আশেপাশের মানুষকেও মোটিভেশানের মাধ্যমে নির্দিষ্ট কাজে উদ্বুদ্ধ করুন।

জীবনের কিছু ক্ষেত্রে আপনাকে ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে সেজন্য নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়ানো জরুরি যখন নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস বাড়বে তখন নির্দ্বিধায় লক্ষ্যের দিকে এগিয়ে যেতে পারবেন।

নীরবতা নীতিতে ফোকাস করুন

যখন আপনাকে কেউ কোন চ্যালেঞ্জিং বা জটিল প্রশ্ন করবে তখন তৎক্ষণাৎ সেটার উত্তর না দিয়ে কিছুক্ষণ নীরব থাকুন এবং ভাবুন। উত্তর দিতে আপনি ৫-২০ সেকেন্ড সময় নিতে পারেন। এই অভ্যাসটি আপনার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বাড়াতে সাহায্য করবে।

এটা কেন জরুরি? মানুষকে যখন জটিল বা চ্যালেঞ্জিং কোন প্রশ্ন করা হয় তখন তার মস্তিষ্ক অস্থির হয়ে পড়ে এবং সঠিক ভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা কমে যায়, তাই আপনার উচিত মস্তিষ্ককে শান্ত করা।

উত্তরের আগে নিজেকে তিন প্রশ্ন করুন

যেকোনো বিষয়ে কাউকে জবাব দিতে বা উত্তর দিতে আপনি আগে নিজেকে তিনটি প্রশ্ন করুন। কমেডিয়ান Craig Ferguson তার একটা সাক্ষাৎকারে তিনটি প্রশ্নের কথা উল্লেখ্য করেছেন যেগুলো আপনার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স এর পরিচয় দেবে।

  • এটি কি বলা দরকার?
  • এটি কি আমাকে বলতেই হবে?
  • এটি আমাকে এখনি বলতে হবে?

জবাবের আগে অবশ্যই এই তিনটি প্রশ্ন নিজেকে করুন তাহলে হয়তো পরবর্তীতে আফসোস করতে হবে না।

ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখার চেষ্টা করুন

একজন ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স সমৃদ্ধ ব্যক্তি সঠিক ভাবে তার Attitude বা মনোভাবকে ব্যবহার করতে পারে। যেকোনো বিষয়ে নেতিবাচক মনোভাব আপনাকে কোন কাজ করতে বাধা দিতে পারে অন্যদিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করতে পারে ইতিবাচক মনোভাব।

দিনের শুরুটা ইতিবাচক মনোভাব দিয়ে শুরু করতে ভোরে উঠে নামায এবং মেডিটেশন করতে পারেন এবং কাজে যেতে পারেন। ডেক্সে বা অফিস রুমে পজিটিভ Quotes রাখতে পারেন।

সমালোচনাকে ভাল ভাবে গ্রহণ করুন

সমালোচনাকে ভাল ভাবে গ্রহণ করতে পারার উপর আপনার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বৃদ্ধি অনেকাংশেই নির্ভর করে। উচ্চ ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স সমৃদ্ধ ব্যক্তিরা, অন্যের কাছে নিজের সমালোচনা শুনে হটাৎ করেই ক্ষুব্ধ না হয়ে সময় নেয় এবং ভাবে।

আর তাই নিজের সমালোচনায় প্রতিবাদ না করে এর কারণ খুঁজে বের করুন এবং নিজের নেতিবাচক দিক গুলো থেকে নিজেকে বের করে আনুন। সমালোচনাকে নিজের সংশোধনের পথ হিসেবে চিন্তা করুন।

শেষ কথা

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স মানব জীবনের একটি চলমান প্রক্রিয়া, আপনি যত বেশি এর চর্চা করবেন আপনার মাঝে ততবেশি এটি প্রতিফলিত হবে। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স বাড়াতে আপনি আপনার জানার আগ্রহকে বাড়ান এই বিষয়ে বিভিন্ন বই নিয়ে পড়াশুনা করুন।

Sohanur Rahman

Raihan, working on website design & development, Digital Marketing, writing articles, translation, and SEO.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button