শিশু স্বাস্থ্যে মোবাইল থেকে নির্গত রেডিয়েশন কতটা ক্ষতিকর? মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায়।
শিশু স্বাস্থ্যে মোবাইল থেকে নির্গত রেডিয়েশন কতটা ক্ষতিকর? মোবাইল রেডিয়েশন থেকে বাঁচার উপায়।
শিশুরা স্বাভাবিক ভাবেই চারপাশের সবকিছু বড়দের মত গ্রহণ করতে পারে না। বড়রা অনেক ক্ষতিকর প্রভাব থেকে নিজেদের রিকোভার করতে পারলেও শিশুরা তা পারে না। যেহেতু শিশু বয়স মন ও দেহ গঠনের সেহেতু এই সময়টা খুবই নাজুক থাকে। আধুনিক প্রযুক্তির যুগে চারপাশে রয়েছে প্রচুর রেডিয়েশন যা প্রাপ্তবয়স্ক একজন ব্যক্তির ক্ষেত্রে মানিয়ে নেয়া যতটা সহজ তারচেয়ে অনেক কঠিন শিশুদের জন্য। হ্যাঁ, রেডিয়েশনের সকল বয়সী মানুষেরই ক্ষতি হয় তবে শিশুদের ক্ষতি হয় তুলনামূলক বেশি।
মোবাইল রেডিয়েশন কি?
মোবাইল রেডিয়েশন মূলত মোবাইল ফোনের মাধ্যমে উৎপন্ন হওয়া ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রেডিয়েশন। যখন আমরা ফোন ব্যবহার করি, তখন এটি সিগন্যাল পাঠাতে এবং গ্রহণ করতে রেডিয়েশন উৎপন্ন করে। এই রেডিয়েশন সাধারণত রেডিও তরঙ্গের মধ্যে পড়ে এবং মানুষের স্বাস্থ্যে এর প্রভাব নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল ফোনের অতিরিক্ত ব্যবহারে কিছু স্বাস্থ্যগত সমস্যা হতে পারে, তবে এ বিষয়ে এখনো বিতর্ক রয়েছে।
মোবাইল রেডিয়েশন এর ক্ষতিকর দিকসমূহ ও তার থেকে বাঁচার উপায়
স্মার্টফোন, আইপ্যাড, ট্যাবলেট সহ বিভিন্ন ওয়ারলেস ডিভাইস থেকে নির্গত হচ্ছে প্রচুর পরিমাণে রেডিয়েশন যা মানব শরীরের জন্য ক্ষতিকর। আমরা ফোনে যখন কথা বলি তখন মোবাইল থেকে রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি নির্গত হয় এবং সেটা আশেপাশের নেটওয়ার্কে প্রেরণ করা হয়। আমরা যখন কল ধরি, ইন্টারনেট ব্যবহার করি তখন ফোন রেডিও ফ্রিকোয়েন্সি গ্রহণ করে। এই ধরণের মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন যেমন শিশুদের জন্য ক্ষতিকর তেমনি গর্ভবতী মায়েদের জন্যও ক্ষতিকর। মায়ের পেটে থাকা অবস্থাতেও শিশু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে রেডিয়েশনের কারণে।
বিভিন্ন গবেষণা বলছে শিশুদের এই ধরনের রেডিয়েশন শোষণ হার প্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় বেশি, আর ভ্রূণ রয়েছে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। সম্প্রতি করা একটা গবেষণা বলছে প্রাপ্ত বয়স্কদের তুলনায় শিশুদের ব্রেন টিস্যু মাইক্রোওয়েভ রেডিয়েশন শোষণ করে দ্বিগুণ হারে। শুধু তাই নয় শিশুদের বোন মেরু বা অস্থি মজ্জা বড়দের তুলনায় দশগুণ বেশি রেডিয়েশন শোষণ করে। রেডিয়েশনের এই ভয়াবহতা থেকে বাচতে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশে শিশুদের ওয়ারলেস ডিভাইস ব্যবহার নিয়ে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
মোবাইল রেডিয়েশন শিশুদের বিভিন্ন রোগের কারণ হতে পারে যেমন, ব্রেইন টিউমার, অনিদ্রা, স্থূলতা, এবং বিভিন্ন মানসিক সমস্যা। মাত্রাতিরিক্ত ফোন আপনার সন্তানের লো IQ এবং অপরিণত শারীরিক বিকাশেরও কারণ হতে পারে।
ভয়াবহ ব্যাপার হচ্ছে সময়ের সাথে সাথে এই ধরণের ক্ষতিকর মোবাইল রেডিয়েশনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যেহেতু মোবাইল আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করতে হয় সেহেতু চাইলে আমরা এটা ত্যাগ করতে পারব না। তবে সচেতন থেকে ক্ষতি অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব। আপনার মনে রাখতে হবে ফোনে কথা না বললেও কিন্তু এটি থেকে রেডিয়েশন নির্গত হবে। তাই আমরা যখন ফোন ব্যবহার করব না তখন আমাদের উচিৎ এটি নিরাপদ স্থানে রাখা। ফোন কানে লাগিয়ে কথা বলার চেয়ে একটু দূরে রেখে কথা বলা আপনার ক্ষতির হার অনেকটাই কমিয়ে দিতে পারে। শিশুদেরকে এই ফোনের ক্ষতিকর দিক থেকে বাচাতে, আপনাকে থাকতে হবে একটু বেশি সচেতন যেমন, গর্ব বতী মায়েদের থেকে ফোন দূরে রাখতে হবে এবং স্তন্যদানের সময় কখনোই ফোন ব্যবহার করা যাবে না।
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকে ফোন কি ব্রেইন ক্যান্সারের কারণ হতে পারে? বিভিন্ন গবেষণা এবং বিশেষজ্ঞদের মতামতের ভিত্তিতে বলা যায়, মোবাইল ফোন এবং বিভিন্ন ওয়ারলেস ডিভাইস সরাসরি ব্রেন ক্যান্সারের কারণ না হলেও, এর থেকে নির্গত বিভিন্ন রশ্মি ধীরে ধীরে ব্রেন টিউমারের কারণ হতে পারে। মাত্রাতিরিক্ত ফোন ব্যাবহার এই টিউমার থেকে নিয়ে যেতে পারে ব্রেন ক্যান্সারের দিকে।
Pew center নামে একটি রিসার্চ সেন্টার প্রকাশ করেছে কিশোরদের দিনের দীর্ঘসময় প্যান্টের সামনের পকেটে ফোন রাখা তাদের প্রজনন স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এতে করে শুক্রাণু ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আবার মেয়েদের ক্ষেত্রে শরীরের কাছাকাছি ফোন রাখার ফলে তাদের ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকিও বেড়ে যেতে পারে।
ক্যাবলের মাধ্যমে ইন্টারনেট কানেকশন ব্যবহার করলে ক্ষতি থেকে অনেকটাই বেচে থাকা সম্ভব, তবে যদি রাউটার ব্যবহার করতেই হয় তাহলে নিশ্চিত করতে হবে সেটা যেন শিশুদের থেকে দূরে থাকে। শিশুরা বেশিরভাগ সময় ব্যয় করে এমন স্থানে কখনোই ওয়ারলেস ডিভাইস রাখা যাবে না। আপনাকে মনে রাখতে হবে মোবাইল ফোন কখনোই শিশুদের খেলনা সামগ্রী নয়।
মোবাইল ফোনে যদি আপনার শিশু কোন ভিডিও দেখতে চায় তাহলে সেটা তাকে আগে ডাউনলোড করে দিন। ডাউনলোড করে ফোনটি Airplane মুডে দিয়ে ফোনটি তার হাতে দিন। সরাসরি ভিডিও দেখলে ফোন থেকে প্রচুর পরিমাণে রেডিয়েশন নির্গত হয়। আপনার ফোনের নেটওয়ার্ক সিগনালের দিকে খেয়াল রাখুন, যদি সিগনাল কম থাকে তাহলে ফোন অবশ্যই দূরে রাখুন। নেটওয়ার্ক সিগনাল কম থাকলে ফোন স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি রেডিয়েশন নির্গত করে।
যেহেতু মোবাইল ফোন থেকে নিজেকে এবং আপনার সন্তানকে পুরোপুরি সরিয়ে নিতে পারবেন না সেহেতু কিছু পদক্ষেপ এবং আপনার সচেতনতা ক্ষতির পরিমাণ অনেকটাই কমিয়ে আনতে পারে।
এধরণের লিখা পেতে পড়ুন আমাদের Life Doze এর লিখাগুলো পড়ুন। ধর্ম, দর্শন, ও বিজ্ঞান বিষয়ে জানতে পড়ুন Insight Zone এর লিখা।