সাইকোলজি

শিশুদের জন্য কেন অনলাইন গেমিং ক্ষতিকর ? কিভাবে ক্ষতি থেকে রক্ষা করবেন

PUBG, Free fire, Fortnite, Minecraft অথবা Animal Crossing, এর মত গেম গুলো যখন ইন্টারনেটে জনপ্রিয়তার শীর্ষে তখনই শিশুদেরকে ভবিষ্যৎ ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে বাবা-মাকে সচেতন হতে হবে। পূর্বের তুলনায় এখন বাবা-মা অনলাইন গেমিং নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহ প্রকাশ করছে আর এর কারণও আমরা জানি। কখনো কখনো নিউজের হেডলাইনে পাওয়া যায় গেম খেলে শিশুর আত্মহত্যার মত ঘটনা। তাছাড়া PUBG নিয়ে আমাদের দেশ সহ ভারত পাকিস্তানের মত দেশ গুলোতে হইচই এর তো শেষই নেই।

শিশুদেরকে অনলাইন গেমিং এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে বাঁচতে এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে আপনাকে অবশ্যই তিনটি বিষয় সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা রাখতে হবে যেমন, অনলাইন ভিডিও গেমিং এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব, কেন গেম গুলোর সাথে অনলাইন শব্দটি যুক্ত হল, প্যারেন্টিং কন্ট্রোল অ্যাপ। চলুন এ পর্যায়ে বিষয় গুলো সম্পর্কে বিস্তারিত জানা যাক।

অনলাইন ভিডিও গেমিং এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব

অনলাইন ভিডিও গেমিং এ শিশুরা যে কমন ঝুঁকিতে থাকে সেটা হচ্ছে বুলিং৷ অনলাইন গেমিং এ আপনার শিশু বিভিন্ন ভাবে বুলিং এর শিকার হতে পারে। কিছু দিন পর পর বিভিন্ন জনপ্রিয় গেম এ এডাল্ট কন্টেন্ট নিয়ে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে। গেমিং এর কোন কোন লেভেলে আপনার শিশুর সামনে চলে আসতে পারে এডাল্ট সিন, যা তার জন্য কতটা ক্ষতিকর সেটা হয়তো নতুন করে বলার কিছু নেই।

তাছাড়া অনলাইন গেমিং যেহেতু বিভিন্ন পক্ষ পুরোপুরি অপরিচিত থাকে এবং তার কোন আইডেন্টিটি থাকে না সেহেতু এখানে একটা ঝুঁকি থাকে যে আপনার শিশু বুলিং এর শিকার হতে পারে। এখানে ঝুঁকি বললে ভুল হবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিশুরা বুলিং এর শিকার হয়, অনেকে আছে গেম খেলার চেয়ে এসব নেতিবাচক বিষয় গুলো বেশি উপভোগ করে।

অনলাইন গেমিং এ আরেকটি কমন ঝুঁকি হচ্ছে আর্থিক ক্ষতি, আমরা হয়তো ভিডিও গেমিং অ্যাপ গুলো In-Purchase ফিচার সম্পর্কে জানি। তো এই ফিচারের মাধ্যমে আপনার অজান্তেই আপনার শিশু আপনার ক্রেডিট কার্ড খালি করে ফেলতে পারে। খেয়াল করে দেখবেন প্রতিটি গেম এ কয়েন, জেমস কিনতে ডলারের প্রয়োজন হয়, তো আপনার শিশু বুঝে না বুঝে কার্ড ইনফরমেশন থার্ডপার্টি বিভিন্ন কোম্পানিকে দিয়ে ফেলতে পারে।

ভিডিও গেম এ অনলাইন শব্দটির মানে কি?

ভিডিও গেম অনেক আগে থেকে শিশুদের কাছে দারুণ আকর্ষণীয় একটি বিষয়। কিন্তু বর্তমান সময়ে এই ভিডিও গেম তাদের আসক্তিতে পরিণত হয়েছে। আর একজন স্কুলগামী বাচ্চা থেকে শুরু করে কলেজ পড়ুয়া কিশোরের এই গেমের প্রতি আসক্তি তার ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিতে পারে। আপনার মনে প্রশ্ন আসতে পারে এই আসক্তির মুল কারণ কি?

বর্তমান সময়ে PUBG, Free Fire, Fortnite, Minecraft এর মত গেম গুলো নিয়ে এত মাতামাতি এবং হইচই এর কারণ এগুলো হচ্ছে অনলাইন গেম! গতানুগতিক গেম এবং অনলাইন গেমের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। গতানুগতিক বা অফলাইন গেম গুলোতে বিরোধী পক্ষ থাকে কম্পিউটার, কিন্তু অনলাইন গেম গুলোতে আপনার বিরোধী বা যে পক্ষ খেলবে সেটা হবে আরেকজন মানুষ। আর এই থিউরিতেই বর্তমান সময়ে গেমিং কোম্পানি গুলো শিশুদের টার্গেট করে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করছে।

সোশ্যাল মিডিয়া ওয়েবসাইট গুলোর আধিক্যের কারণে বর্তমান অডিয়েন্সদের মধ্যে পারস্পারিক যোগাযোগ নিয়ে বেশ আগ্রহ তৈরি হয়েছে আর যখন এই বিষয়টি গেমিং এ চলে আসে তখনই শিশু থেকে শুরু করে প্রাপ্তবয়স্করা ব্যাপক ভাবে আকৃষ্ট হচ্ছে গেম গুলোতে। অনলাইন গেম গুলোতে আমাদের ফাইট হচ্ছে আরেকজন মানুষের সাথে হয়তো বা কখনো দুইজনের মধ্যে কনভারসেশনও হচ্ছে, আর এই বিষয় গুলোই শিশুদের টানছে।

প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ কি এবং কেন ?

parental control app

আপনি যখন অনলাইন গেমিং সম্পর্কে জানবেন এবং এর ক্ষতিকর দিক গুলো অনুধাবন করবেন, তখনই চাইবেন এই ক্ষতি থেকে আপনার শিশুকে বাচাঁতে । আর এই অনলাইন গেমিং এর ক্ষতি থেকে বাচাঁতে সর্বপ্রথম আপনাকে সাহায্য করতে পারে বিভিন্ন প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ৷ নির্দিষ্ট কিছু অ্যাপ ব্যবহার করে আপনি জানতে পারবেন আপনার শিশুর আগ্রহ কোন দিকে, কি নিয়ে সার্চ দিচ্ছে এবং কোন গেম ইন্সটল দিচ্ছে। পদক্ষেপ মূলক ব্যবস্থা হিসেবে চাইলে আপনি সেই সমস্ত প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ ব্যবহার করে তাদের স্ক্রিন-টাইম লিমিট করার পাশাপাশি বিভিন্ন গেম ব্লকও করতে পারেন।

আশা করছি এতক্ষণে আপনি কিছুটা হলেও জানতে পেরেছেন, অনলাইন গেমিং কি? এবং কেন শিশুদের অনলাইন গেমিং এর আগ্রহ আসক্তিতে পরিণত হয়। এই পর্যায়ে আমরা আলোচনা করব কিভাবে অনলাইন গেমিং এর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে আপনি আপনার সন্তানকে রক্ষা করবেন।

নির্দিষ্ট দিন বা সময়ের জন্য গেমিং নিষিদ্ধ বা লিমিট করুন

আপনি যখন দেখবেন আপনার সন্তান গেমিং এর দিকে বেশি আসক্ত হয়ে পড়েছে এবং পড়াশুনায় মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছে তখন তাকে গেমিং থেকে কিছু দিনের জন্য দূরে রাখার চেষ্টা করুন অথবা দিনে নির্দিষ্ট সময় গেমিং এর জন্য বেধে দিন। গেমিং থেকে কিছুদিন দূরে থাকলে আশা করা যায় আসক্তি আস্তে আস্তে কিছুটা কমে আসবে।

প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ গুলোর যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করুন

প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ গুলোর মাধ্যমে জানুন কোন গেম গুলোর প্রতি সে আগ্রহী, ঝুঁকি পূর্ণ কোন গেম এর প্রতি আপনার শিশু আগ্রহ দেখালে সাথে সাথে সেটা ব্লক করুন এবং অ্যাপ ইন্সটল পারমিশন এনেভল করে দিন যাতে করে আপনার পারমিশন ছাড়া সেই সমস্ত গেম ইন্সটল দিতে না পারে।

প্যারেন্টাল কন্ট্রোল অ্যাপ দিয়ে নির্দিষ্ট গেমিং কিওয়ার্ড এবং ওয়েবসাইট গুলোও ব্লক লিস্টে ফেলে দিন যাতে করে কোন ভাবে তারা আবার সে সমস্ত গেম এর মুখোমুখি না হয়।

গেম গুলো ভাল ভাবে কনফিগারেশন করুন

যে সমস্ত গেম গুলো আপনার শিশু খেলতে চায় বা তাকে যেগুলো থেকে দূরে রাখা কোন ভাবেই সম্ভব না সেই সমস্ত গেম গুলো সঠিক ভাবে কনফিগার করুন। গেম এর পেমেন্ট সিস্টেম অফ করে দিন, কনভারসেশন এবং ভয়েস চ্যাটের মত ফিচার গুলো ডিজেবল করে দিন।

গেম এর Terms & Conditions ভাল ভাবে চেক করুন

কোন গেম শিশুকে খেলতে দেবার আগে সেটার Terms & Conditions ভাল ভাবে পড়ে নিন এবং দেখুন Abuse , Adults জাতীয় কোন ঝুঁকি আছে কিনা। যেকোনো গেম এর Terms & Conditions যথেষ্ট বড় থাকে তাই বলে এটি স্কিপ করে যাবেন না, আপনার সন্তানের ভালোর জন্য অবশ্যই সময় নিয়ে সব কিছু জানুন।

গেম এর র‍্যাটিং চেক করুন

প্রায় প্রতিটা গেম এর ইউজারের বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট একটা র‍্যাটিং থাকে। গেমটি কোন বয়সের ইউজারদের জন্য উপযুক্ত সেটা বিবেচনায় বিভিন্ন কোম্পানি র‍্যাটিং দেয়। কোন গেম আপনার সন্তানকে খেলতে দেবার আগে অবশ্যই র‍্যাটিং গুলো ভাল ভাবে যাচাই করুন।

শেষ কথাঃ

আজকে অনলাইন গেমিং এর প্রতি আপনার শিশুর আগ্রহ খুব তাড়াতাড়ি আসক্তিতে পরিণত হতে পারে আর তাই এখনি এই বিষয়ে সচেতন হোন। শিশুদের বয়স উপযোগী নয় এমন গেমিং থেকে তাদের দূরে রাখুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button