Uncategorized

লিডারশীপ বা নেতৃত্ব কি ? একজন আদর্শ নেতার কি কি গুণ থাকবে

একটি সাধারণ লক্ষ্য অর্জনের দিকে কাজ করার জন্য একদল মানুষকে অনুপ্রাণিত বা উদ্বুদ্ধ করার কৌশলই হল নেতৃত্ব। ব্যবসায়িক দিক বিবেচনায় কোন কোম্পানির নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে বিভিন্ন স্ট্রেটেজি অবলম্বন করে কর্মীদের সঠিক ভাবে পরিচালিত করাই হচ্ছে নেতৃত্ব।

লিডারশীপ বা নেতৃত্ব কি?

নেতৃত্ব বা লিডারশীপ হল এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন নির্বাহী, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্যদের আচরণকে প্রভাবিত করতে পারে। নেতৃত্ব হল কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক, বা ম্যানেজারের এমন একটি গুন বা ক্ষমতা যা অধস্তনদের আত্মবিশ্বাস এবং প্রত্যয়ের সাথে কাজ করতে প্ররোচিত করে।

কিথ ডেভিসের মতে, “নেতৃত্ব হল মানুষের এমন একধরণের ক্ষমতা বা গুন যা অন্যদেরকে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে উৎসাহিত করতে পারে।

লিডারশীপ বা নেতৃত্ব এর বৈশিষ্ট্য

নেতৃত্ব গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ জানে কিভাবে ব্যক্তিগত জীবনে এবং কর্মক্ষেত্রে মানুষকে সঠিক ভাবে পরিচালিত করে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করা যায়। তবে যেকোনো সময় মানুষকে কোন লক্ষ্যের দিকে পরিচালনা করাকে নেতৃত্ব বলা যাবে না। লিডারশীপ বা নেতৃত্বের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেমন,

  • এটি একটি আন্ত -ব্যক্তিগত প্রক্রিয়া যেখানে একজন ম্যানেজার লক্ষ্য অর্জনের দিকে শ্রমিকদের প্রভাবিত করে। কোন ব্যক্তির মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি রয়েছে মানে তার মধ্যে কয়েকটি বিশেষ গুনও রয়েছে যেমন, বুদ্ধিমত্তা, পরিপক্কতা, দূরদর্শিতা ।
  • এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যেখানে দুই বা ততোধিক ব্যক্তি যুক্ত থাকে , তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে।
  • একজন নেতা, সাংগঠনিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য গোষ্ঠীর আচরণের প্রকৃতি পরিবর্তন ও রূপায়নের সাথে জড়িত থাকে।
  • নেতৃত্ব হচ্ছে ব্যাপারটা পুরোপুরি পরিস্থিতি নির্ভর । পৃথিবীতে সেরা কোন নেতৃত্বের স্টাইল বা ধরন নেই। সবকিছু পরিস্থিতি মোকাবেলার উপর নির্ভর করে।

নেতৃত্বের গুরুত্ব

নেতৃত্ব, ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ যা দক্ষতা বৃদ্ধি এবং সাংগঠনিক লক্ষ্য অর্জনে সাহায্য করে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি সঠিক নেতৃত্ব জরুরি। এই পর্যায়ে আমরা নেতৃত্বের গুরুত্ব নিয়ে আলোচনা করব।

কাজ শুরু করা

নেতা এমন ব্যক্তি যিনি কাজ শুরু করেন এবং অধীনস্থদের জন্য নীতি এবং পরিকল্পনা তৈরি করেন এবং তাদেরকে নীতিমালা সম্পর্কে অভিহিত করেন । প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা স্বাভাবিকভাবেই প্রতিষ্ঠানের নতুন লক্ষ্য বা পরিকল্পনা সম্পর্কে জানেন না আর এই সব কিছু জানানোর কাজটি করে নেতা। একজন নেতা তার সঠিক নেতৃত্ব গুণাবলি এবং দিক নির্দেশনার মাধ্যমে কর্মীদের লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত করবে এবং কাজ শুরু করবে।

প্রেরণা প্রদান

কর্মীদের উৎসাহ এবং প্রেরণা প্রদান করার মাধ্যমে তাদের কাছ থেকে কাজ আদায় করার দায়িত্বটি কিন্তু একজন সঠিক নেতাই নেন। তিনি নেতৃত্বকে সঠিক ভাবে ব্যবহার করে কর্মীদের অর্থনৈতিক এবং উৎসাহমূলক পুরস্কার দিয়ে অনুপ্রাণিত করেন যাতে কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের প্রতি দায়িত্বশীল থাকে।

দিকনির্দেশনা প্রদান

একজন নেতা শুধু মাত্র কাজ শুরুই করেন না তিনি কর্মীদের কাজ তত্ত্বাবধান করেন এবং তাদের সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। কর্মীদের কার্যকর গাইডেন্স প্রদান করেন। এখানে গাইডেন্স মানে অধস্তনদেরকে তাদের কাজ কার্যকরভাবে এবং দক্ষতার সাথে সম্পাদন করতে নির্দেশ দেওয়াকে বুঝায়। তত্ত্বাবধান এবং দিকনির্দেশনার ফলে একদিকে যেমন কর্মীরা কাজে ফাঁকি দিতে পারে না অন্যদিকে ভুল করলে দ্রুত সংশোধনের পথ খুঁজে পায়।

আত্মবিশ্বাস তৈরি

প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনে আত্মবিশ্বাস গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা থেকে শুরু করে ফিল্ড লেভেল কর্মীদের আত্মবিশ্বাসী হওয়াটা অত্যন্ত জরুরী। একজন নেতা বা লিডার, অধীনস্থদের কাছে তাদের ভূমিকা বা দায়িত্ব পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করবে এবং কিভাবে লক্ষ্যগুলি কার্যকরভাবে অর্জন করা যায় সেই নির্দেশিকা প্রদান করবে। একই সাথে উপযুক্ত একজন নেতা তার নেতৃত্ব গুণাবলির মাধ্যমে কর্মীদের অভিযোগ এবং পরামর্শ শুনবে । আর এভাবে সে কর্মীদের আত্মবিশ্বাসী করে তুলবে।

কাজের পরিবেশ তৈরি

সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠানে সুন্দর একটি কর্মপরিবেশ তৈরি করতে পারে। একটি প্রতিষ্ঠান একই সাথে ঊর্ধ্বতন ও অধস্তনদের পরিশ্রমের মাধ্যমেই সফলতা লাভ করে৷ তাই এই পক্ষ গুলোর মধ্যে একটি ভাল রিলেশনশিপ তৈরি করা জরুরি আর এই কাজটি করতে পারে একজন উপযুক্ত নেতা। তিনি কর্মীদের সমস্যা গুলো শুনেন এবং সেগুলো নিয়ে উচ্চপর্যায়ে আলোচনা করেন সমাধানে পরামর্শ দেন। একই সাথে সঠিক নেতৃত্বের অন্যতম বৈশিষ্ট্যই হল সকল পক্ষের হয়ে কাজ করা। সঠিক নেতৃত্ব গুন সম্পন্ন নেতা প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের পক্ষে মানবিক থেকে তাদের জন্য সুন্দর কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত করেন।

একজন নেতার গুণাবলি

নেতৃত্ব বিষয়টি মানুষ জন্মগত ভাবে লাভ করে অথবা প্রশিক্ষণ, পড়াশুনা, চর্চার মাধ্যমে অর্জন করে। একজন নেতার মধ্যে থাকা আলাদা কিছু গুণাবলি যেগুলো তাকে অন্যদের থেকে পৃথক করে। নেতা বা লিডারের অসংখ্য গুণাবলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু গুণাবলি থাকা উচিত যেমন,

ফিজিক্যাল এপিয়ারেন্স

একজন নেতা অবশ্যই শারীরিকভাবে সুস্থ থাকবে, পরিপাটি পোশাক পরিচ্ছদ পরিধান করবে, নিজেকে সবার কাছে আকর্ষণীয় করে তুলে ধরবে। একজন যোগ্য নেতা কখনো তার কর্ম-পরিবেশে এমন কোন পোশাক পড়বে না যা সেখানে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। একই সাথে তার একটি চমৎকার ব্যক্তিত্ব থাকবে, সবার সাথে তার আচরণ হবে অমায়িক।

দূরদর্শিতা

একজন নেতাকে দূরদর্শী হতে হবে৷ নেতা সকল পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ভবিষ্যতে তা কেমন হতে পারে সেই বিষয় গুলো সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করবেন। একই সাথে তিনি পরবর্তী অবস্থার জন্য আগে থেকেই পরিকল্পনা তৈরি করে রাখবেন।

বুদ্ধিমত্তা

কঠিন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নিতে এবং সমস্যা সমাধানে একজন নেতাকে যথেষ্ট বুদ্ধিমান হতে হবে। তিনি এনালাইটিক্যাল বা বিশ্লেষণাত্মক হবেন যার মাধ্যমে সকল পরিস্থিতির সুবিধা এবং অসুবিধা বিবেচনা করতে পারবেন। হঠাৎ করে উদ্ভূত কোন সমস্যার ইতিবাচক এবং নেতিবাচক উভয় দিকই সঠিক ভাবে খুঁজে বের করতে পারবে বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একজন নেতা।

যোগাযোগের দক্ষতা

একজন নেতার অবশ্যই কমিউনিকেশন স্কিল বা যোগাযোগ দক্ষতা থাকবে। সে তার ঊর্ধ্বতন এবং অধস্তনদের সাথে সঠিক ভাবে যোগাযোগ করার ক্ষমতা রাখবে এবং উভয় পক্ষের সাথে তার ভাল একটা সম্পর্ক থাকবে। এই যোগাযোগ দক্ষতার মাধ্যমে সে একই সাথে কর্মীদের অভাব অভিযোগ শুনবে এবং ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে সমাধান দেয়ার চেষ্টা করবে।

পক্ষপাতমুক্ত আচরণ

একজন নেতা সবসময় পক্ষপাতমুক্ত থাকবে। প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট ব্যক্তির দিকে নিজের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত না করে সবাইকে সমান ভাবে বিবেচনা করবে। একজন উপযুক্ত নেতা সম্পূর্ণ পক্ষপাতমুক্ত থেকে ঘটনা এবং যুক্তি বিবেচনা করে নিজের মতামত তৈরি করবে।

দায়িত্ববোধ

যেকোনো ব্যক্তির উচিত তার কাজের প্রতি দায়বদ্ধ থাকা। একজন নেতার অবশ্যই সাংগঠনিক লক্ষ্যের প্রতি দায়িত্ববোধ থাকতে হবে । লিডার সব সময় নিজের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করবেন কারণ তার কাছ থেকেই কর্মীরা শিখবে এবং উদ্বুদ্ধ হবে। নেতা যদি কাজে দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দিতে পারে তাহলে সে কর্মীদের কাছ থেকেও দায়িত্ব আচরণ আশা করতে পারবে না৷

আত্মবিশ্বাস এবং ইচ্ছাশক্তি

অধস্তনদের আস্থা অর্জনের জন্য নিজের উপর আস্থা রাখা গুরুত্বপূর্ণ। একজন নেতা নিজের যোগ্যতাকে বিশ্বাস করবে এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে কঠিন পরিস্থিতিতে সিদ্ধান্ত নেবে৷

মানবতাবাদী

একজন নেতার গুণাবলি গুলোর মধ্যে এই গুনটি থাকা অপরিহার্য কারণ তিনি প্রতিষ্ঠানের মানুষের সাথে আচরণ করেন এবং তাদের সাথে কাজ করেন। তাকে তার অধীনস্থদের ব্যক্তিগত সমস্যাগুলো অত্যন্ত যত্ন ও মনোযোগ সহকারে শুনতে হবে এবং সমাধান দেবার চেষ্টা করতে হবে।তাছাড়া প্রতিষ্ঠানে সুন্দর কর্ম-পরিবেশ নিশ্চিত করতেও এই গুনটি দরকার।

শেষ কথা

নেতৃত্ব এমন একটি গুণ যা নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনে সহায়তা করতে একদল মানুষকে কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে পারে আবার এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে একজন নির্বাহী, নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জনের জন্য অন্যদের আচরণকে প্রভাবিত করে। নেতৃত্ব গুণাবলি সম্পন্ন মানুষ তার ব্যক্তিগত জীবনে এবং কর্মক্ষেত্রে মানুষকে সঠিক ভাবে পরিচালিত করে নির্দিষ্ট লক্ষ্য অর্জন করতে পারে।

কিছু মানুষ আছেন জন্মগত ভাবে নেতৃত্বের গুণাবলি নিয়ে পৃথিবীতে আসেন, তাই বলে সে একজন উপযুক্ত নেতা হয়ে যাবে এটা বলা যাবে না। নেতৃত্ব গুনটি অনুশীলন এবং চর্চা করার বিষয়। জন্মগত ভাবে নেতৃত্ব গুণাবলি না থাকলেও কোন ব্যক্তি চাইলে উপযুক্ত পড়াশোনা, প্রশিক্ষণ এবং চর্চার মাধ্যমে এই গুণাবলি অর্জন করতে পারেন। আবার নেতৃত্ব গুণ সম্পন্ন মানুষও চর্চার অভাবে এই দক্ষতা বা ক্ষমতা হারিয়ে ফেলতে পারে।

Sohanur Rahman

Raihan, working on website design & development, Digital Marketing, writing articles, translation, and SEO.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button