টাইম ম্যানেজমেন্টসাইকোলজিস্বাস্থ্য

লাইফ স্কিল কাকে বলে? শিশুর জন্য জরুরী ছয়টি লাইফ স্কিল

লাইফ স্কিল বা দক্ষতা বলতে এমন সব গুণাবলিকে বুঝায় যেগুলোর মাধ্যমে একজন ব্যক্তি তার জীবনকে সুন্দর ভাবে পরিচালিত করতে পারবে এবং যেকোনো চ্যালেঞ্জ দক্ষতার সাথে ওভারকাম করতে পারবে। কোন ব্যক্তি নিজের মধ্যে লাইফ স্কিল ডেভেলপ করে কর্মক্ষেত্র এবং ব্যক্তিগত জীবনে আসা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জকে জয় করতে পারে। লাইফ স্কিল সম্পন্ন ব্যক্তি নিজের জীবনের কঠিন সিদ্ধান্ত গুলোও দক্ষতার সাথে নিতে পারে৷

অনেক গুলো লাইফ স্কিলের মধ্যে অন্যতম লাইফ স্কিল হচ্ছে, কমিউনিকেশন স্কিল, ক্রিটিক্যাল থিংকিং, আত্মসচেতনতা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, টাইম ম্যানেজমেন্ট, টিম-ওয়ার্ক ইত্যাদি। আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব শিশুদের মধ্যে কোন লাইফ স্কিল গুলো ডেভেলপ জরুরী।

শিশুকে মানুষের মত মানুষ করে গড়ে তুলতে ছোট বেলা থেকেই তাকে নীতি নৈতিকতার শিক্ষা দিতে হবে। শিশুকে আগে বুঝাতে হবে কোন কাজটি ভাল কোন কাজটি ভাল না, সমাজের জন্য কোন কাজটি ক্ষতিকর এবং কোন কাজটি জরুরী। তো এমন কিছু স্কিল রয়েছে যেগুলো প্রতিটি শিশুর জন্য জরুরী।

শিশুর জন্য জরুরী ছয়টি লাইফ স্কিল

দেশ, জাতি, ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে নির্দিষ্ট কিছু স্কিলের গুরুত্বের তারতম্য হতেই পারে। কোন সমাজে বা দেশে কিছু স্কিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, একই ভাবে অন্য দেশে এর গুরুত্ব কিছুটা কম হতে পারে। গুরুত্ব যেমনই হোক এমন কিছু স্কিল রয়েছে যেগুলো প্রতিটি শিশুর জন্য জরুরী। নিচে সেই সমস্ত স্কিল নিয়ে আলোচনা করা হল,

কমিউনিকেশন স্কিল: প্রতিটি শিশুর জন্য কমিউনিকেশন স্কিল প্রয়োজন। কমিউনিকেশন স্কিল বলতে বুঝায় একজন মানুষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপর একজন মানুষের সাথে কীভাবে আচরণ করছে। কিভাবে নতুন কারো সাথে যোগাযোগ করতে হয় কীভাবে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্কে মেইনটেইন করতে হয় এই সব কিছু কমিউনিকেশন স্কিলের অন্তর্ভুক্ত। আরও সহজ করে বললে বিশেষ করে লিখিত এবং মৌখিক বার্তা প্রেরণ এবং গ্রহণ করার ক্ষমতাকে বলা হয় কমিউনিকেশন স্কিল। সুতরাং ছোট বেলা থেকেই শিশুর কমিউনিকেশন স্কিলের দিকে গুরুত্ব দিতে হবে।

সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ : প্রবলেম সলভিং বা সমস্যা সমাধান করতে পাওয়ার অন্যতম একটি লাইফ স্কিল। যেকোনো সমস্যা ভাল ভাবে এনালাইসিস করতে পারা, সমাধান খুঁজে বের করা এবং বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করতে পারা একটি বিশেষ গুন। এই স্কিলটি একজন মানুষের সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সহজ করে দেয়। সুতরাং সমস্যা সমাধান ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ এর মত লাইফও কিন্তু শিশুর জন্য দরকার।

ক্রিয়েটিভ থিংকিং: আপনার শিশুকে শিক্ষা দিতে হবে কীভাবে ক্রিয়েটিভ থিংকিং করা যায়। নতুন কোন ইস্যু বা সমস্যা দেখা দিলে সেটার কার্যকরী এবং ইউনিক সমাধান বের করতে পারার ক্ষমতাকে বলা হয় ক্রিয়েটিভ থিংকিং। যাদের মধ্যে এই লাইফ স্কিলটি রয়েছে তারা কোন ঘটনা, পর্ব অভিজ্ঞতা এবং বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে এবং এর জন্য সঠিক সমাধান খুঁজে বের করতে পারে।

ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স: Emotional intelligence হচ্ছে আপনার এমন দক্ষতা যা দ্বারা আপনি নিজের এবং আশেপাশের মানুষদের আবেগ বুঝতে পারেন। ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স সমৃদ্ধ মানুষ শুধু মাত্র আবেগই বুঝতে পারেন না বরং তা ইতিবাচক ভাবে ব্যবহার করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করতে পারেন। শিশু বয়স থেকে একজন মানুষের এই বিশেষ গুণটি অর্জন করা উচিৎ।

আত্মনিয়ন্ত্রণ: আত্মনিয়ন্ত্রণ অন্যতম একটি লাইফ স্কিল। যেকোনো পরিস্থিতি, হোক ভাল বা খারাপ, নিজেকে এবং নিজের আবেগকে কতটা নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারছেন সেটা নির্ভর করবে আপনার আত্মনিয়ন্ত্রণ দক্ষতার উপর। নিজের ফিলিংস এবং আবেগকে সব সময় দেখাতে হয় না বা দেখানো উচিৎ না। আবার নিজেকে নির্দিষ্ট কাজ থেকে বিরত রাখতে পারাও কিন্তু আত্মনিয়ন্ত্রণের অংশ। শিশুদের ক্ষেত্রে এর একটি উদাহরণ হতে পারে, ফোনে গেম খেলতে ইচ্ছে করছে তারপরেও পরীক্ষার কথা ভেবে পড়াশুনায় মনোযোগ দেয়া।

সহনশীলতা: আপনার শিশুকে সহনশীলতার শিক্ষা দিতে হবে। ব্যর্থতাকে মেনে নেয়া এবং পরবর্তীতে পুনরায় চেষ্টা করার নামই হচ্ছে সহনশীলতা। সহনশীলতা মানুষকে হেরে যেতে দেয় না। এই স্কিলটির মাধ্যমে একজন ব্যক্তি পূর্বে করা ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন করে লক্ষ্য নির্ধারণ করে। শিশুরা পরীক্ষায় খারাপ করলে তাদের বকাঝকা করা যাবে না, তাদের সহনশীল হবার শিক্ষা দিতে হবে এবং পরের বার ভাল করার জন্য উৎসাহিত করতে হবে।

এই ছয়টি লাইফ স্কিল প্রতিটি শিশুর মধ্যে ডেভেলপ করা উচিৎ তা হলে সে তার আশেপাশের পরিবেশকে সঠিক ভাবে বিবেচনা করতে পারবে, বিভিন্ন ইতিবাচক নেতিবাচক দিক পর্যবেক্ষণ করে এ থেকে শিক্ষা নিতে পারবে এবং বাস্তব জীবনে কাজে লাগাতে পারবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button