Teenage healthপ্যারেন্টিংশিক্ষাসাইকোলজিস্বাস্থ্য

মোবাইল ফোনে আসক্ত একটি প্রজন্ম! জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন অপরাধে

মাদকাসক্তির ভয়াবহতা আমরা জানি কিন্তু বর্তমান সময়ের মোবাইল ফোন আসক্তির ভয়াবহতাকে আপনি কি ছোট করে দেখবেন? বর্তমান সময়ে এই ফোন আসক্তির ভয়াবহতাকে এড়িয়ে যাবার কোন সুযোগ নেই। গবেষকেরা বলছেন, ফোন আসক্তির ফলে শিশুরা হয়ে পড়ছে পড়াশুনা বিমুখ, ব্যাহত হচ্ছে শারীরিক ও মানসিক বিকাশ এমনকি কিশোর বয়সে জড়িয়ে পড়ছে না রকম অপরাধে। বিজ্ঞজনেরা বলছে এমনটি চলতে থাকলে সামনে পৃথিবী পেতে যাচ্ছে একটা অসুস্থ প্রজন্ম।

কিশোর বয়সে কিংবা তরুণ বয়সে গিয়ে কেউ ফোনে আসক্ত হচ্ছে না, ফোনের প্রতি এই নেশা তৈরি হচ্ছে শিশু বয়স থেকেই৷ বাচ্চা কান্নাকাটি করছে, কাজে বিরক্ত করছে তদের হাতে বাবা মা ফোন তুলে দিলেন। ফলে ফোনের সাথে যে তার সম্পর্ক তৈরি হচ্ছে তা ভাঙা বলতে গেলে প্রায় অসম্ভব । কান্না থামাতে ফোন, খাওয়াতে গেলে ফোন, এমনকি ফোন দেবার লোভ দেখিয়ে পড়তে বসানো। শিশুরা আস্তে আস্তে বড় হবে এবং ফোনের প্রতি তৈরি হবে নির্ভরশীলতা। ফোনের ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই, শারীরিক, মানসিক, বিভিন্ন ভাবে আপনার সন্তান ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

শিশু বয়স থেকে শুরু করা যাক, কাজে বিরক্ত করছে আপনার সন্তানকে ফোন দিয়ে বসিয়ে রাখলেন। এক সময় দেখবেন সব কিছুতে তার ফোন লাগছে ৷ এই বয়সে সম্ভাব্য যে ক্ষতি তার হতে পারে, চোখের সমস্যা, শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হওয়া। এর চেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে মানসিক সমস্যা। ফোনের জন্য মানসিক সমস্যা আপনার সন্তানকে তার লাইফের প্রতিটা স্টেজে ফেস করতে হবে।

একটু বড় হলে স্কুলে ভর্তি করালেন, ফোনের প্রতি আকর্ষণ কিন্তু তার এখনো আছে। এখন থেকে ফোনের সাথে তার ইন্টারেকশন আগের চেয়ে আরও বেশি হবে। ফোনের মাধ্যমে যেহেতু এখন পড়াশোনা কর‍তে হয়, আপনি চাইলেও এর থেকে তাদের কে দূরে রাখতে পারবেন না। এই সময়ে যে সমস্যা গুলো তৈরি হবে, স্ট্যাডি ম্যাটারিয়াল বাদ দিয়ে ফোনে গেমিং, ইউটিউবিং করা শুরু করবে তারা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যাবে ফোনে, হয়ে পড়বে পড়াশুনায় অমনোযোগী।

ফোন সন্তানের জন্য কতটা ভয়ংকর হতে পারে এটা বাবা মা উপলব্ধি করে তাদের কিশোর বয়সে। কলেজে উঠে স্বাভাবিক ভাবেই কিশোর কিশোরীরা নিজেদেরকে স্বাধীন ভাবতে শুরু করে৷ ফোনের মাধ্যমে প্রবেশ করে সোশ্যাল মিডিয়াতে আর পরিচিত হয় নতুন নতুন মানুষের সাথে। এই বয়সে করা ছোট ভুল অনেকের পুরো জীবন নষ্ট করে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়া বুলিং এবং প্রেমে ব্যর্থতার মত ঘটনায় কিশোর কিশোরীদের মধ্যে দেখা দেয় আত্মহত্যা প্রবণতা। অনেক বাবা মা টেরই পায় না তাদের সন্তান আবেগের বশে কত বড় বড় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে।

স্মার্টফোনের মাধ্যমে আপনার সন্তান কিশোর বয়সেই জড়িয়ে পড়তে পারে বিভিন্ন ধরণের অপরাধে। সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখা বিভিন্ন ফ্যান্টাসি! তৈরি হয় কিশোর গ্যাং। বিভিন্ন ধরণের অশ্লীলতা, সাইবার বুলিং এর শুরুটাও হয় এখান থেকে। কিছু দিন আগে কয়েকজন কিশোর, পত্রিকার হেডলাইন হয়েছিল টেলিগ্রাম অ্যাপ ভুল ভাবে ব্যবহার করে। টেলিগ্রাম অ্যাপে মেয়েদের নগ্ন ভিডিও বিভিন্ন গ্রুপ খুলে শেয়ার করার মাধ্যমে রাতারাতি তারা আয় করে কোটি টাকা। উঠতি বয়সী কিশোর কিশোরীরা প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে, একে অপরকে ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি পাঠানোর সুযোগটা কাজে লাগায় এই কিশোররা । CID তদন্তে জানা যায় ওই সমস্ত ছবি ওইসব গ্রুপের এডমিনদের সরবারহ করতো তাদেরই প্রেমিকরা। একবার ভেবে দেখুন এই ধরণের ঘটনা একটা পরিবারের জন্য কতটা বিপদজনক হতে পারে।

এখানে শুধু কয়েকটা অপরাধের উদাহরণ দেয়া হল, এ ছাড়াও অনিয়ন্ত্রিত স্মার্টফোন ব্যবহার ফলে কিশোররা জড়িয়ে পড়তে পারে অন্যান্য আরও অপরাধে। যে সময় মেধা, মননকে কাজে লাগিয়ে নিজের সৃজনশীলতা দিয়ে বিশ্ব জয় করার কথা সেই সময় কিশোররা নিজেকে নিয়ে যাচ্ছে অন্ধকারের দিকে।

এখনো সময় আছে আপনার সন্তানকে এই সমস্ত ঝুঁকি থেকে বাচাতে ফোন ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করুন এবং তাদের দিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখুন। ফোন ব্যবহার করা একেবারে বন্ধ করতে না পারলেও আপনার যথাযথ পদক্ষেপ নিরাপদ করতে পারে আপনার সন্তানের ভবিষ্যৎ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button