Teenage health

টিনেজার মেন্টাল হেলথ গাইড

টিনেজার মেন্টাল হেলথ গাইড

সাধারণত মেন্টাল হেলথ একজন ব্যক্তির ইমোশন এবং মানসিক সুস্থতার সাথে জড়িত। আপনার মেন্টাল হেলথ বা মানসিক স্বাস্থ্য কেমন, এটা নির্ভর করবে আপনি কেমন অনুভব করছেন, কি চিন্তা করা করছেন কি ধরণের আচরণ করছেন সেটার উপর । কিশোর বয়সে আপনি বিভিন্ন কারণে মানসিক চাপে থাকতে পারেন। স্কুল, পরিবার, বন্ধুবান্ধব, ফিউচার প্ল্যান বিভিন্ন কারণে কিশোর বয়সে আপনি মানসিক ভাবে প্রেশারে থাকতে পারেন। আপনি যদি মনে করেন এই বিষয় গুলো থেকে বের হয়ে আসতে আপনার কষ্ট হচ্ছে তাহলে বাবা মাকে সমস্যা খুলে বলতে পারেন তাদের সাথে আলোচনা করতে পারেন আর যদি পরিবারে এমন প্র্যাকটিস না থাকে তাহলে ভাল কোন ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন।

মাদকাসক্তি

আপনি যদি ইতিমধ্যে মাদকাসক্ত হয়ে যান তাহলে এটা আপনার সব চেয়ে বড় ভুল ছিল। মাদকাসক্তি আপনাকে কোন কারণ ছাড়াই মানসিক ভাবে পিড়ায় রাখতে পারে। আপনি যখন বারবার মাদক দ্রব্য ব্যবহার করবেন তখন স্বাভাবিকভাবেই আপনার ব্রেন তার ট্র‍্যাক হারিয়ে ফেলবে।

মাদকাসক্তির জন্য কিশোর বয়সে ছেলেমেয়েরা অস্বাভাবিক আচরণ করা শুরু করে। পরিবারের সাথে দূরত্ব তৈরি হয় এবং অন্ধকারের দিকে ধাবিত হতে থাকে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরীক্ষা করতে গিয়ে অনেক কিশোর মাদকের কবলে পড়ে যায়। কখনো কখনো পরিবারের কাছ থেকেও তারা এটা শিখতে পারে। পরিবারে অন্য সদস্যারা ধূমপান করলে, পরিবারে বেড়ে উঠা কিশোর এটিকে স্বাভাবিক ভেবে সবার অগোচরে ধূমপান করতে পারে।

আপনার যদি মাদকাসক্তি থাকে এবং মানসিক ভাবে নিজেকে অসুস্থ ভাবেন তাহলে এর প্রধান কারণ হতে পারে মাদক। মাদকের ভয়াবহতা ব্যাপক, এটি পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। ব্যাপক ক্ষতির হাত থেকে বাচতে এখনি নিজেকে এর থেকে মুক্ত করুন। ইন্টারনেটে অনেক থেকে বের হয়ে আসার প্রচুর ভাল ভাল আর্টিকেল আছে পড়ুন প্রয়োজনে ডাক্তারের পরামর্শ নিন।

দুঃচিন্তা

মানসিক ভাবে সুস্থ থাকতে অন্যতম বাধা হতে পারে দুঃচিন্তা৷ দুঃচিন্তা মানুষের একটা স্বাভাবিক মানসিক অবস্থা। যেমন সামনে পরীক্ষা থাকলে আপনি এটা নিয়ে টেনশন করতে পারেন, খেলাধুলার ফলাফল নিয়েও আপনি দুঃচিন্তা করতে পারেন, এটা স্বাভাবিক। তবে কখনো এই দুঃচিন্তা অস্বাভাবিক হয়ে যায় এবং এটি দীর্ঘমেয়াদে আমাদের মধ্যে থেকে যায়।

নির্দিষ্ট কোন কারণে দুঃচিন্তা স্বাভাবিক তবে যদি কোন কারণ ছাড়াই আপনি দুঃচিন্তা করেন এবং এটা থেকে বের হতে না পারেন তখনই সমস্যা তৈরি হয়। আপনার মধ্যে এমন সমস্যা থাকলে আপনি শারীরিক ভাবেও অসুস্থ হয়ে যেতে পারেন। আশার কথা হচ্ছে কিশোর বয়সের এই ধরণের সমস্যার জন্য ভাল চিকিৎসা রয়েছে। আপনি হালকা মেডিকেশন নিলেই হয়তো এই ধরণের সমস্যা থেকে বের হয়ে আসতে পারেন৷ তাই দেরি না করে ডাক্তারের শরণাপন্ন হোন।

ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা

কিশোর বয়সটাতে ডিপ্রেশন বা বিষণ্ণতা একটা কমন বিষয়। শারীরিক পরিবর্তনের জন্য কিশোর বয়সে ছেলে মেয়েরা বিষণ্ণতায় ভোগতেই পারে। কিশোর বয়সে আপনি যেকোনো সময় ডিপ্রেশনে থাকতে পারেন আবার হটাৎ করেই স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারেন। তবে ডিপ্রেশনকে তখনই অস্বাভাবিক ধরা হবে যখন এটি কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হবে এবং খুব বেশি মানসিক অশান্তি দেবে।

সামাজিক, পারিবারিক, একাডেমিক, ব্যক্তিগত বিভিন্ন কারণে কিশোর কিশোরীরা ডিপ্রেশনে থাকতে পারে এবং এটি দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক সমস্যা তৈরি করতে পারে৷ অস্বাভাবিক ডিপ্রেশনের কিছু লক্ষ্মণ রয়েছে যেগুলোর মাধ্যমে এটি বুঝতে পারবেন। অস্বাভাবিক ডিপ্রেশনের প্রভাব পড়ে ঘুমে, খাওয়া দাওয়ায় এবং আচরণে। ঘুম কমে যেতে পারে, খাওয়া দাওয়ায় অনীহার তৈরি হতে পারে এবং আপনি আশেপাশের মানুষ জনের সাথে খারাপ ব্যবহার করতে পারেন।

এই ধরনের ডিপ্রেশনে আপনার মেডিটেশন এবং কাউন্সিলিং উভয়ই প্রয়োজন। ঘরোয়া উপায়ে ডিপ্রেশন থেকে বাচতে পরিবারের সাথে বেশি বেশি সময় কাটাতে পারেন, মেডিটেশন করতে পারেন, বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে পারেন। মনের কথা খুলে বলা যায় এমন কেউ থাকলে তার সাথে সব কিছু শেয়ার করতে পারেন এতে অনেকটা হালকা হতে পারবেন। সবচেয়ে ভাল হয় ভাল কোন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ দেখান যথাযথ মেডিকেশন এবং কাউন্সিলিং নিন।

আত্মহত্যা

বর্তমান সময়ে কিশোর কিশোরী মৃত্যুর অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে আত্মহত্যা। আমেরিকান একাডেমী অফ পেডিয়াট্রিক্স অনুসারে, ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী যুবকদের জন্য আত্মহত্যা মৃত্যুর তৃতীয় প্রচলিত কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে যে আত্মহত্যাকারী দশজন কিশোর-কিশোরীর মধ্যে অন্তত নয়জন কোনো না কোনো ধরনের মানসিক অসুস্থতায় ভোগে, যেমন মাদক, উদ্বেগ, বিষণ্ণতা বা অন্য ধরনের আচরণগত সমস্যা। আরও জানা যায় কিশোর-কিশোরীরা আত্মহত্যার দীর্ঘদিন ধরে ভাবে না একটি নির্দিষ্ট ঘটনায় তারা এই ধরণের সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে।

আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাউন্সিলিং জরুরি। আগে মানসিক সমস্যা গুলো নির্ধারণ করতে হবে এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে। কিশোর কিশোরীর আত্মহত্যা প্রবণতা কমাতে সব চেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে পারে পরিবার৷ পরিবার থেকে যথাযথ সাপোর্ট পেলে যেকেউ এমন ভয়াবহ সিদ্ধান্ত থেকে নিজেকে বের করে নিয়ে আসতে পারে। আর তাই বাবা মার উচিৎ সন্তানদের সাথে খোলামেলা আলোচনার সম্পর্ক তৈরি করা যাতে যেকোনো সমস্যা তারা পরিবারের সাথে শেয়ার করতে পারে এবং খারাপ সময় পরিবারের সাপোর্ট চাইতে পারে।

কিশোর মেন্টাল হেলথ সাপোর্টে বাবা মার ভূমিকা

আমরা আগের পার্টে, আত্মহত্যা রোধে পরিবারের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা করেছি। শুধু আত্মহত্যা রোধেই নয় বরং যেকোনো মানসিক সমস্যা সমাধানে মা বাবার ভূমিকা সব চেয়ে বেশি। চলুন জেনে নেয়া যাক টিনেজার মেন্টাল হেলথ সাপোর্টে বাবা মা কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারেন বা তাদের করনীয় কি হবে,

সন্তানকে ফিলিংস শেয়ার করতে উৎসাহিত করুন

আপনার সন্তানের খোজ খবর নিন এবং এটা তার কাছ থেকেই নিন। তাকে তার মানসিক অবস্থা সম্পর্কে জিজ্ঞাস করুন। জানতে চান, সারাদিন কি করেছে ভাল কোন ঘটনা আছে কিনা।

তাদের অনেক কাজ আপনার অপছন্দ হতে পারে তবে এটা সরাসরি বলতে যাবেন না , এতে করে ভাল সম্পর্ক তৈরি হবে না। আর এভাবে যখন মা বাবার সাথে সন্তানের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক তৈরি হবে তখন এসব মানসিক সমস্যা অনেকটাই কমে আসবে।

সন্তানকে সময় দিন

যখন বুঝবেন আপনার সন্তান মানসিক ভাবে খারাপ অবস্থার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে তখন যতটুকু পারেন তাদের সময় দেয়ার চেষ্টা করুন। নিজের কাজ থেকে ছুটি নিন কোথাও ঘুরতে যান, বাইরে খেতে যান। এটাও জরুরি যে তাকে বিভিন্ন কাজ থেকে কিছু সময়ের জন্য নিস্তার দিন।

যেমন সে প্রতিদিন যে কাজ গুলো করতো সেগুলো থেকে ব্রেক দিতে বলুন, সেটা হতে পারে হোমওয়ার্ক, ঘরের কোন কাজ বা নিয়ম মাফিক পড়তে বসা ইত্যাদি।

শেষ কথা

কিশোর বয়সটাতে সবাই একটু বেশি আবেগী এবং সংবেদনশীল থাকে আর তাই এই সময়টাতে দরকার একটু বেশি যত্নের। কিশোর কিশোরীদের নিজের প্রতি এই সময় সবচেয়ে বেশি যত্নশীল হতে হবে, ভুল পথে পা বাড়ানো যাবে না, মাদক তথা বিভিন্ন নিষিদ্ধ বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হবে।

কিশোর কিশোরীর মানসিক স্বাস্থ্য ভাল রাখতে এর পরই আসে বাবা মার দায়িত্ব কর্তব্য । নিজের সন্তান কখন কি করছে কখন মানসিক ভাবে খারাপ সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে সব কিছুতে মা বাবার নজর রাখতে হবে তাদের পাশে থাকতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button