প্যারেন্টিংস্বাস্থ্য

কোন লক্ষ্মণ গুলোর মাধ্যমে বুঝবেন আপনার সন্তান ফোন আসক্ত? ফোন আসক্তি কমানোর উপায়

আমরা ইতিমধ্যে আমাদের ওয়েবসাইটে শিশুদের ফোন আসক্তির খারাপ দিক গুলো তুলে ধরেছি। ধারণা দেবার চেষ্টা করেছি ফোন আসক্তির ফলাফল কতটা ভয়াবহ হতে পারে। আজকে আমরা জানব কীভাবে আপনি বুঝবেন আপনার সন্তান ইতিমধ্যে ফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে গেছে।

যেকোনো কিছুর প্রতিই আসক্তি ভাল না। আর সেটা যদি ক্ষতিকর কোন কিছু হয় তাহলে তো কথাই নেই। আমরা সবাই জানি ছোট থেকে শুরু করে যেকোনো বয়সী মানুষের জন্যই মোবাইল ফোন ক্ষতিকর। মোবাইল থেকে নির্গত রেডিয়েশন সবার জন্যই সমান হুমকি সরূপ। যেহেতু শিশুরা প্রাপ্তবয়স্কদের তুলনায় সব কিছু সহজে গ্রহণ করতে পারে না সেহেতু মাত্রাতিরিক্ত ফোন ব্যবহার তাদের শারীরিক ও মানসিক ঝুঁকির কারণ হতে পারে।

 

আর তাই শিশুদের যেন ফোনের প্রতি আসক্তি তৈরি না হয় সেদিকে আপনার কড়া নজর রাখতে হবে। কত গুলো সাইন আছে যেগুলোর মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন আপনার শিশু ফোনের প্রতি আসক্ত হয়ে যাচ্ছে,

প্রথম এবং প্রধান লক্ষ্মণ হচ্ছে সারাদিন ফোন হাতে নিয়ে বসে থাকবে। কোন ভাবেই ফোন থেকে তাকে বিরত করতে পারবেন না। শুয়ে, বসে, খেতে সব সময় মোবাইল নিয়ে থাকবে। মোবাইল হাত থেকে নিয়ে গেলে আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে, কান্নাকাটি শুরু করে দেবে।

ফোন বা ডিজিটাল ডিভাইসের প্রতি আসক্ত শিশুরা নিজেদের ইমোশনকে কন্ট্রোল করতে পারে না। হটাৎ করে কান্নাকাটি শুরু করে দিতে পারে অহেতুক কারণে এবং কান্নাকাটি থামার একমাত্র উপায় তার হাতে ফোন দিয়ে দেয়া।

ঘুমের সাইকেল নষ্ট হয়ে যাবে, যে সময় ঘুমানো উচিত সে সময় ঘুমাবে না। পর্যাপ্ত ঘুম হবার আগেই ঘুম ভেঙে যাবে। রাতে অনেক দেরিতে ঘুমানো এবং হটাৎ করে ঘুম ভেঙ্গে যাবার মত অভ্যস্ততা তৈরি হবে।

স্কুল এবং এক্সট্রা কারিকুলাম এক্টিভিটিতে ফোকাস থাকবে না, স্কুলে যেতে চাইবে না। হোম ওয়ার্ক, পড়াশুনায় অমনোযোগী হয়ে পড়বে।

পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক মেইনটেইন করতে প্রতিনিয়ত ব্যর্থ হবে বাস্তবিক জীবন সম্পর্কে অসচেতন থাকবে।

ফোন আসক্তি কমাতে করনীয়

আপনি যখন শিশুর মধ্যে ফোন আসক্তির লক্ষ্মণ গুলো দেখবেন তখন কিছু পদক্ষেপ আপনাকে গ্রহণ করতে হবে। রাতারাতি শিশুদের এই অভ্যাস পরিবর্তন করা সম্ভব না ধীরে ধীরে আপনাকে আগাতে হবে। চলুন জেনে নেয়া যাক শিশুর ফোন আসক্তি কমানোতে করনীয় কি হবে,

আপনার প্রথম কাজ হবে স্ক্রিন টাইম লিমিট করে দেয়া। আপনার সন্তান যেন নির্দিষ্ট স্ক্রিন টাইমের বাইরে এক মিনিটও ফোন ব্যবহার করতে না পারে সেদিকে কড়া নজর দিন।

শিশুকে অন্যান্য কাজের দিকে বেশি ফোকাস রাখার চেষ্টা করুন। হোম ওয়ার্ক, পড়াশুনা, ঘরের কাজ, খেলনা সামগ্রী দিয়ে ব্যাস্ত রাখুন৷ শিশু হলেও ঘরের ছোট ছোট কাজ তাকে নিয়ে করানোর চেষ্টা করুন।

কোন কাজের রিওয়ার্ড হিসেবে কখনোই স্মার্টফোন অফার করবেন না। যেমন আজকে দুইটা চ্যাপ্টার পড়লে তোমাকে ফোন দেব, এতটুকু খাবার শেষ করলে ফোনে ইউটিউব দেখতে দেব। এই কাজ গুলো কখনোই করা যাবে না।

কান্নাকাটি থামানোর এক মাত্র উপায় হিসেবে ফোন ব্যবহার করবেন না। শিশু যেকোনো কারণে কাঁদলে, বিরক্ত করলে আমরা তাকে ফোন দিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করি। এটাও একেবারেই উচিত নয়। সচেতন বাবা মা হিসেবে আপনার শিশুর কান্না থামানোর অন্য উপায় খুঁজে বের করুন৷ ফোন তার হাতে দিয়ে সব কিছুর সমাধান করার চেষ্টা করবেন না।

ফোনের মাধ্যমে বিভিন্ন কিছু শেখানো থেকে বিরত থাকুন। আমাদের দেশের অনেক বাবা মা আছেন যারা ভাবেন, ফোনের মাধ্যমে ইউটিউব থেকে বর্ণমালা গুলো শিখানো যাক, যেহেতু আমি কাজে ব্যস্ত ফোনে শিক্ষণীয় কোন কিছু দিয়ে রাখা যাক। এমনটিও করা যাবে না, কোন কিছু শিখতে বই, খাতা, পেন্সিল, এর বিকল্প নেই। শিশুর হাতে ফোন না দিয়ে, আপনি নিজে তার সাথে বসুন তাকে শেখানোর চেষ্টা করুন।

আপনার শিশু যদি ফোনের প্রতি আসক্ত হয়েই যায় তাহলে এই আর্টিকেলে উল্লেখিত পদক্ষেপ গুলো ধৈর্য সহকারে গ্রহণ করার চেষ্টা করুন। আশা করা যায় আপনার সন্তানের ফোন আসক্তি আস্তে আস্তে কেটে যাবে এবং সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button