প্যারেন্টিং

শুধু সাফল্যে নয় ব্যর্থতায়ও সন্তানের পাশে থাকুন

শুধু সাফল্যে নয় ব্যর্থতায়ও সন্তানের পাশে থাকুন

যতই দিন যাচ্ছে আমরা আমাদের সন্তানদের উপর ততবেশি চাপ প্রয়োগ করছি। ঠিক মত বয়স হবার আগেই কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই আমরা চাপিয়ে দিচ্ছি বইয়ের বোঝা! প্রতি দুই ঘণ্টা পর পর বাসায় আসছে টিউশন স্যার। সারাদিন পড়াশুনার পর পড়াশুনা, যার ফলে শিশুরা মানসিক ভাবে দারুণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এই গেলো শিশু বয়স, একটু বড় হলে বোর্ড পরীক্ষা, ভাল স্কুলে ভর্তি হবার জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা। চারদিকে শুধু প্রতিদ্বন্দ্বিতা এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা! সব কিছু চুকিয়ে রেজাল্ট! আশানুরূপ ফলাফল করতে না পারলে শিশু কিশোরদের পড়তে হয় চরম মানসিক যন্ত্রণায়। কেন GPA 5 পাও নি, পাশের বাসার ছেলেটা গোল্ডেন A+ পেয়েছে। আর এই পুরো সিস্টেমটার মধ্যে একটা কিশোর কিশোরীকে কতটা কঠিন অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হয় এটা আমাদের দেশের অধিকাংশ বাবা মাই বুঝতে চায় না।

পরীক্ষা ফলাফলের মত তুচ্ছ ঘটনায় যখন কিশোর বয়সে আপনার ছেলে বা মেয়ে আত্মহত্যার মত ঘটনা ঘটিয়ে ফেলে তখনই হয়তো আপনার টনক নড়ে। কিন্তু ততদিনে অনেক দেরি হয়ে যায়। আপনি সন্তানের পেছনে অনেক টাকা হয়তো ঢালছেন, তবে সেটা কি একান্তই আপনার লাভের আশায় নাকি সন্তানের ভালর জন্য? ৯০% ক্ষেত্রে আপনার উত্তর হবে, সন্তানের ভালোর জন্য করছি। কিন্তু আপনি জানেন না, একদিকে টাকা ঠেলে অন্যদিকে সন্তানকে রোবটের মত চালিয়ে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই কিন্তু আপনারা ব্যর্থ হচ্ছেন। আপনার ব্যর্থতা এখন প্রমাণিত না হলেও কয়েক বছর পরে সেটার প্রমাণ পাবেন। আমাদের দেশের বাবা মারা যদি সন্তানদের রোবট আর GPA 5 বানানোর মেশিন হিসেবে তৈরি না করতো তাহলে প্রতিটি বোর্ড এক্সামের রেজাল্টের পর এত এত কোমলমতি আত্মহত্যা করতো না। তাছাড়া আমাদের দেশে কিশোর কিশোরীরা অভিভাবকদের তাদের মনে কথা সমস্যা খুলে বলতে পারে না, বললেও অভিভাবকরা সেটার গুরুত্ব দেয় না ফলে দীর্ঘ মেয়াদি মনোমালিন্য তৈরি হয়৷  এবং অনেক সময় কিশোর কিশোরীর সুইসাইড নোটে বাবা মাকে নিয়ে অভিযোগ করতে দেখা যায়।

সন্তানকে রোবট না বানিয়ে সাফল্যের পেছনে না ছুটে তাকে ভাল মানুষ বানানোর চেষ্টা করুন। তাকে সময় দিন, তাকে বুঝতে দিন, যাই হোক আপনি সব সময় তার সাথে আছেন, আপনি সাফল্যে যেমন তার পাশে আছেন তেমনি ভাবে ব্যর্থতায়ও তার সাথে আছেন। সন্তানকে কখনো বলবেন না, সে GPA 5 পেলে তাকে বিশাল কিছু গিফট করবেন, বরং না পেলেও তাকে নির্দিষ্ট জিনিসটি দেবার চেষ্টা করুন। আমাদের দেশের বেশির ভাগ বাবা মা সন্তানদের পেছনে লাখ লাখ টাকা ফেলতে পারে কিন্তু সন্তানের মন মানসিকতা বুঝা বা তাদের সময় দেয়ার মত সময় খুব কম মানুষেরই আছে, আর যাদের আছে তারাই দিন শেষে সফল হয়।

আমাদের দেশের অভিভাবকদের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে তারা নিজেরা নিজেদের প্রত্যাশার ভার সন্তানদের উপর চাপিয়ে দেয়। তারা এটা মানতে নারাজ সবাই GPA 5 পাবে না, সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির সুযোগ পাবে না এবং সর্বোপরি সবার মেধা সমান না। প্রতিটি মানুষের স্মৃতি শক্তিতে ধারণ ক্ষমতা সমান নয়, সবার মেধা এক নয় এটা আপনাকে বুঝতে হবে। আপনার পাশের বাসার ভাবীর ছেলে GPA 5 পেয়েছে আপনার মেয়ে পায় নি এর মানে এই নয় যে আপনার মেয়ে চেষ্টা করে নি। সে চেষ্টা অবশ্যই করেছে তবে মেধায় সে তার সমান পর্যায়ে যেতে পারে নি, এটা মেনে নিতে শিখুন।

পড়াশুনায় ব্যর্থতা বা অন্যকোন কারণে সব সময় সন্তানদেরকে অন্য কারো সাথে তুলনা করবেন না, এতে করে আপনার সাথে আপনার সন্তানের কখন দূরত্ব তৈরি হবে সেটা আপনি নিজেও টের পাবেন না। সফল হোক বা ব্যর্থ হোক সব সময় পাশে থাকুন এবং বলার চেষ্টা করুন, “এবার না হয় পরের বার ভাল করবে”। এই একটি বাক্য আপনার সন্তানকে কতটা সাপোর্ট দেবে আপনি নিজেও কল্পনা করতে পারবেন না।

মোট কথা আপনার সন্তানকে সবার আগে ভাল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলুন। তাকে বুঝুন, তার সাথে সময় কাটান, তার সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক তৈরি করুন দেখবেন আপনার সন্তান ভয়ে না এমনিতেই পড়াশুনা করবে। সব সময় মনে রাখবেন পরিবার, সমাজ, দেশের জন্য বিদ্বান নয়, সুশিক্ষিত এবং ভাল মানুষ প্রয়োজন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button