সন্তানের মেন্টাল হেলথকে সাপোর্ট করতে যে কাজ গুলো করবেন
সন্তানের মেন্টাল হেলথকে সাপোর্ট করতে যে কাজ গুলো করবেন
বয়স বাড়ার সাথে সাথে প্রতিটা মানুষের শারীরিক ও মানসিক অবস্থার পরিবর্তন হয় আর এই পরিবর্তন সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় বয়ঃসন্ধি কালে। এই সময়টিতে শিশুর দরকার একটু বেশি যত্ন। এই সময়ে বাবা মার উচিত শিশুর প্রতি আরও যত্নশীল হওয়া এবং তাদের মানসিক অবস্থার খোজ রাখা।
বর্তমান সময়ে শিশুদের প্রতি বাবা মারা অনেক যত্নশীল। তারা শিশুদের সুরক্ষা নিয়ে ইন্টারনেটে ঘাটাঘাটি করেন, কখনো বা বই কেনেন কখনো বিভিন্ন ভিডিও দেখেন। শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি দরকার সেটা হচ্ছে তাদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনা তারা কি বলতে চায় জানা। কোন অপরাধ করে ফেললে আমরা শাস্তি দিয়ে ফেলি,এটা করা যাবে না তাদের কাছে জানতে হবে তারা কেন এমনটি করেছে।
শিশুর মধ্যে আত্মসম্মান বোধ জাগ্রত করুন
একজন মানুষের মধ্যে অন্যতম একটি গুণ হচ্ছে আত্মসম্মান বোধ। আর এটা শিশু বয়স থেকেই মানুষের মধ্যে তৈরি হয় আর তাই অভিভাবকদের উচিৎ শিশু বয়স থেকেই তার মধ্যে আত্মসম্মান বোধ গড়ে উঠতে সাহায্য করা। শিশুর মধ্যে আত্মসম্মান বোধ গড়ে তুলার জন্য আপনাকে তাকে সম্মান করতে হবে। তার কথার গুরুত্ব দিতে হবে। সে কি চায় সেটা শুনতে হবে। ভুল কোন কিছু আবদার করলে সেটা ধমক না দিয়ে সুন্দর করে তাকে বুঝাতে হবে।
কাজের প্রশংসা করুন
সব সময় শিশুদের ভাল কাজের প্রশংসা করুন। তাকে সব সময় ভাল কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে৷ সে যখন কোন কাজ করবে তখন অবশ্যই সেটার প্রশংসা করতে হবে। তার করা কোন কাজের সমালোচনা করা যাবে না৷ এমনটি করলে সে পরবর্তীতে কাজ করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে।
কাজের সমালোচনা না করে কাজটি কিভাবে আরও ভাল করা যায় বা যেতো সেটা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। কাজটা যেমনই হোক, প্রথমেই তাকে বলতে হবে কাজটি সুন্দর হয়েছে। এতে পরবর্তীতে আরও ভাল ভাল কাজ করার আগ্রহ পাবে।
মেন্টাল স্কিল শিক্ষা দিন
আপনার উচিৎ শিশুকে শুরু থেকে আত্মনির্ভরশীল করে গড়ে তুলা। মানসিক অবসাদ বা কঠিন সময় গুলো কিভাবে মোকাবেলা করতে পারে এটা নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করুন। তাদের কিছু স্কিল শিক্ষা দিন। শিশুদের বিশেষ কিছু মেডিটেশন রয়েছে সেগুলো শিক্ষা দিতে পারেন যেমন গভীর ভাবে শ্বাস নেয়া এর মধ্যে একটি। তাকে বিভিন্ন আর্ট করতে বলতে পারেন, তাকে নিয়ে হাটতে বের হতে পারেন।
শিশুদের মতামতের গুরুত্ব দিন
শিশুদের প্রতি আপনার সব সময় ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা উচিত। তাদের কোন কাজ আপনার অপছন্দনীয় হলেও সেটা ইতিবাচক ভাবে তাকে বলতে হবে, এমন ভাবে প্রকাশ করা যাবে না যেন সে ভয় বা কষ্ট পায়। তাদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে। তাদের ভাল লাগা খারাপ লাগার বিষয় গুলো জানার চেষ্টা করতে হবে, তারা যেন খোলাখুলি ভাবে বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করতে পারে, তাদের সাথে সেই সম্পর্ক তৈরি করতে হবে।
শিশুদের মতামত জানতে চাইলে তাদের সাথে বিষয় গুলো নিয়ে আলোচনা করলে তাদের মধ্যে চিন্তার দক্ষতা তৈরি হবে।
শিশুর আচরণ খেয়াল করুন
আপনার শিশুর মেন্টাল হেলথের যত্ন নিতে তার মানসিক অবস্থা এবং আচরণ সম্পর্কে আপনার খেয়াল রাখতে হবে। কিছু কিছু আচরণ খেয়াল করলে আপনি বুঝতে পারবেন মানসিক ভাবে আপনার শিশু কঠিন সময় পাড় করছে। সে সময় গুলোতে আপনাকে বেশি যত্নশীল হতে হবে।
তাছাড়া বয়স বাড়ার সাথে সাথে কিছু পরিবর্তন খুবই স্বাভাবিক এবং সেই সময় দরকার বেশি যত্নের। যখন দেখবেন সে পরিবারের সাথে কম সময় দিচ্ছে, একা একা সময় কাটাচ্ছে, বিষণ্ণ দেখাচ্ছে তখন আপনার তার দিকে নজর দিতে হবে। তাকে বুঝাতে হবে বিষয় গুলো স্বাভাবিক। এই সময় গুলোতে তাকে বেশি সময় দিতে হবে৷
রুটিন মাফিক কর্মকাণ্ড নির্ধারণ করে দিন
রুটিনবিহীন জীবন আরও জন্যই ভাল হতে পারে না। শিশুদের জন্য রুটিন নির্ধারণ করা জরুরি। কখন কি করবে সেটা নির্ধারণ করে দিন। তবে সব সময় রুটিন অনুযায়ী চলতে আপনি তাকে বাধ্য করবেন না। এতে তার কাছে বিষয় গুলো একঘেয়ে লাগতে পারে। পড়াশুনার বাইরেও সপ্তাহে এমন একটি নির্ধারণ করুন যেদিন সবাই একসাথে বাইরে ঘুরতে যাবেন বা খেতে যাবেন। এতে করে তার জীবনে রিফ্রেশ আসবে।
সিদ্ধান্ত নিতে সহায়তা করুন
পরিবারে সব সময় বড়রা সিদ্ধান্ত নেবে, বড়রা সব সময় সঠিক সিদ্ধান্ত নেয় এই মানসিকতার জন্য শিশুদের সিদ্ধান্ত নেয়া থেকে সব সময় বঞ্চিত করা হয়। হ্যাঁ, এটা ঠিক যে ফাইনাল ডিসিশন বড়রাই নেবে কিন্তু তার পরেও শিশুদের সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাথে রাখতে হবে। যখন কোন বিষয়ে তাদের সাথে আলাপ করবেন তখন তারা বুঝবে পরিবারে তারও আলাদা একটা গুরুত্ব রয়েছে। এটি তাকে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করবে।
দৈনন্দিন জীবনে তারা যা ব্যবহার করে সেগুলো তাদের পছন্দ অনুযায়ী কিনতে দিতে হবে। যেমন বিছানার চাদর, পড়ার টেবিল, পোশাক ইত্যাদি। এমন কাজ যেগুলো শিশুর জন্য ক্ষতিকর নয় সেগুলো করতে নিষেধ করা যাবে না। প্রয়োজনে সহযোগিতা করতে হবে আরও বেশি উৎসাহ প্রদান করতে হবে।
দায়িত্বশীল করে গড়ে তুলুন
ছোট থেকে শিশুকে নিজের কাজ, দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। ছোট ছোট কাজ গুলো দিয়ে তাকে নিজের কাজের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অনেক সময় বাবা মারাই তাদের সব কাজ করে দেন এটা একদমই করা উচিৎ না । যেমন খাবার পর নিজের প্লেট নিজে পরিষ্কার করা, সেটা সঠিক জায়গায় রাখা, স্কুল থেকে ফিরে নিজের পোশাক নিজে খুলা৷ ঘুমানোর আগে নিজের বিছানা নিজেই গুছিয়ে রাখা।
শিশুকে বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার দায়িত্ব কর্তব্য সম্পর্কে অবগত করতে হবে। বাবা মার প্রতি তার দায়িত্ব কর্তব্য কি, পরিবারের প্রতি দায়িত্ব কর্তব্য কি সেগুলো তাকে জানাতে হবে। ছোট এবং বড়দের সাথে কিভাবে আচরণ করবে সেগুলো তাকে শিক্ষা দিতে হবে।
নিরাপদ আবাসস্থল তৈরি করা
শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হতে আপনাকে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিতে হবে যেটা হচ্ছে যে পরিবেশে সে বড় হচ্ছে সেটা তার জন্য পুরোপুরি নিরাপদ কিনা। বাসায় কি কি বিনোদন মাধ্যম রয়েছে সেদিকে নজর দিতে হবে৷ যেমন টিভিতে কি সুবিধা এভেইলেবল রয়েছে সেটাকে গুরুত্ব দিতে হবে। এমন কোন কন্টেন্ট রাখা যাবে না যা শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর৷
শিশুকে স্মার্ট ফোন বা ট্যাবলেট, ল্যাপটপ থেকে দূরে রাখাই ভাল তবে যদি দিতেই হয় তবে অবশ্যই নজর রাখতে হবে সে কি কি কন্টেন্ট দেখছে এবং স্ট্রং প্যারেন্টাল কন্ট্রোল রাখতে হবে যেন ভুল করেও কোন ক্ষতিকর কন্টেন্টে চলে না আসে।
শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের নিরাপদ আবাসস্থল নিশ্চিত করতে অবশ্যই তাকে পারিবারিক ঝগড়া কলহ থেকে দূরে রাখুন। শিশুর সামনে ঝগড়া করা থেকে বিরত থাকুন, অবান্তর বিষয় নিয়ে শুধু শুধু তর্ক করা, উচ্চস্বরে চিল্লাপাল্লা করা, রাগারাগি করা থেকে বিরত থাকুন। পারিবারিক আর্থিক সমস্যা, পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা শিশুদের সামনে আলোচনা করবেন না।
তাছাড়া ছোট কোন কারণে শিশুদের বকাঝকা দিবেন না। কোন খেলনা ভেঙে ফেললে বা ভুলে কোন কাজ করে ফেললে তাদের বকাঝকা করা যাবে না তাদের বুঝাতে হবে যে কাজটি করা ঠিক হয় নি।
শেষ কথা
প্রতিটি বাবা মার উচিৎ শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নশীল হওয়া। রেজাল্ট খারাপ হলে বকাঝকা করা, ছোট খাট ভুল হলে শাস্তি দেয়া, এসব করা যাবে না। তাদের বুঝাতে হবে কোন কাজ ভাল, কোন কাজ ভাল না। নিয়মিত শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের নজর রাখার পাশাপাশি তাদের সুষম খাদ্যও নিশ্চিত করতে হবে।