শিক্ষা

শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার

শিক্ষার উদ্দেশ্য হলো শিক্ষার্থীদেরকে যুগোপযোগী জ্ঞান ও দক্ষতা প্রদান করে তাদেরকে দক্ষ জনশক্তি হিসেবে  প্রস্তুত করা। প্রযুক্তিগত কৌশলে শিক্ষার্থীদেরকে দক্ষভাবে গড়ে তোলার লক্ষ্যেই শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। বর্তমান যুগ তথ্য প্রযুক্তির যুগ। আমাদের জীবনের প্রায় সকল ক্ষেত্রেই তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। বর্তমানে প্রযুক্তির ব্যবহার ছড়া আমরা একটি মুহূর্ত কল্পনাও করতে পারি না।

তথ্য প্রযুক্তি কি?

তথ্য প্রযুক্তি বা Information Technology (IT) হলো কম্পিউটার ও টেলিযোগাযোগ ব্যবস্থার মাধ্যমে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ, একত্রীকরণ, সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিনিময় বা পরিবেশনের ব্যবস্থা। আইসিটি শব্দটির ব্যবহার শুরু করে অ্যাকাডেমিক গবেষকরা ১৯৮০ সালের দিকে। কিন্তু শব্দটি জনপ্রিয়তা লাভ করে ১৯৯৭ সাল থেকে। স্টিভেনসন ১৯৯৭ সালে যুক্তরাজ্য সরকারকে দেওয়া এক প্রতিবেদনে এই শব্দটি উল্লেখ করেন, যা পরবর্তীতে ২০০০ সালে যুক্তরাজ্যের নতুন জাতীয় পাঠ্যপুস্তকে সংযোজন করা হয়। তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে তথ্যের একটি ভিন্ন ধরনের মাধ্যমে সাজানো এবং তাকে ব্যবহারকারীদের উপলব্ধ করা হয়, এবং এটি তথ্যের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য যেমন গতি, নিরাপত্তা, ও এটির স্বাধীনতা সরবরাহ করে। তথ্য প্রযুক্তির অংশ হিসেবে কম্পিউটার সফটওয়্যার, হার্ডওয়্যার, নেটওয়ার্ক, ডেটাবেস, ওয়েব ডেভেলপমেন্ট, সাইবার সিকিউরিটি, গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তি, ইলেকট্রনিক মেডিকেল রেকর্ড সিস্টেম, অনলাইন বাণিজ্যিক প্ল্যাটফর্ম, সাইবার সিকিউরিটি, গেইম ডেভেলপমেন্ট, এবং অন্যান্য বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। সাধারণভাবে, তথ্য প্রযুক্তি মানুষের জীবনে গণনা, যোগাযোগ, বাস্তবায়ন, ব্যবসায়িক প্রক্রিয়া, শিক্ষা, স্বাস্থ্য যত্ন, গবেষণা, এবং নিজের নিয়োগ এবং নির্দেশনা উন্নত করতে সাহায্য করে।

শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যাবহার

শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার সমৃদ্ধি এবং শিক্ষার গুণগত উন্নতি এনে দেয়। প্রযুক্তি শিক্ষাক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয় শিক্ষার সমস্যা সমাধান, শিক্ষার প্রক্রিয়া সুখপ্রাপ্ত করতে, শিক্ষার অভিজ্ঞতা স্বার্থমূলক করতে, এবং শিক্ষার কাঠামো মডেল এবং শিক্ষক-শিক্ষার্থীর সম্প্রদান বাড়াতে। এছাড়াও, শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষা প্রস্তুতি, শিক্ষা প্রদান, শিক্ষা মানসিকতা এবং শিক্ষার প্রশাসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষার স্বাভাবিক প্রক্রিয়াকে সহযোগী করতে সাহায্য করে এবং শিক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শেখার অভিজ্ঞতা সুবিধাজনক এবং স্বদেশের প্রযুক্তির অগ্রগতির সমর্থন করে।

শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের উদাহরণ নিম্নলিখিত:

১. অনলাইন শিক্ষা: ইন্টারনেটের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের জন্য শিক্ষা সরবরাহ করা হয়, যা দূরবর্তী শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি করে। এটি মূলত ভিডিও লেকচার, ই-বুক, ব্লগ, পডকাস্ট, ওয়েবসাইট, সামগ্রিক শিক্ষা প্ল্যাটফর্ম, এবং মোবাইল অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে প্রদান করা হতে পারে।

২. শিক্ষার ব্যক্তিগতীকরণ: শিক্ষাক্ষেত্রে তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহার করে শিক্ষকরা প্রতিটি শিক্ষার্থীর প্রয়োজনীয় শিক্ষাগত সাপেক্ষ এবং অগ্রগতির আলোচনা করতে পারে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাগত স্বার্থমূলক বিষয়ের সাথে সাহায্য করতে করণীয় সম্পর্কে ধারণা করে দেওয়া যেতে পারে।

৩. ভর্তি ও ফল প্রকাশেও ভরসা প্রযুক্তি: একটা সময় পর্যন্ত মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের মতো পাবলিক পরীক্ষার ফল প্রকাশ করা হতো পত্রিকায়। এ ছাড়াও পরীক্ষার্থীরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে ফলাফল সংগ্রহ করত। কিন্তু এখন অনলাইনে শিক্ষার্থীদের ফল প্রকাশ করা হয়। শিক্ষা বোর্ডের ওয়েবসাইটে নির্ধারিত জায়গায় ক্লিক করে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ইআইআইএন (প্রতিষ্ঠানের পরিচিত নম্বর) দিয়ে প্রতিষ্ঠানভিত্তিক ফল (রেজাল্ট শিট) ডাউনলোড করে। এ ছাড়া নির্ধারিত পদ্ধতিতে ওয়েবসাইটে ক্লিক করে রোল ও রেজিস্ট্রেশন নম্বর দিয়েও ফল ডাউনলোড করা যায়। আর ফলাফল প্রকাশের পর মুঠোফোনে খুদে বার্তার মাধ্যমে মুহূর্তেই পরীক্ষার ফল জানা যায়।

৪.অভিজ্ঞতা ভিত্তিক শেখানো: সম্পূর্ণ ভিন্নধর্মী শিক্ষাগত অভিজ্ঞতা সরবরাহ করার জন্য প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যেটি শিক্ষার্থীদের শেখানো বিশেষভাবে আকর্ষণীয় করে।

৫.মূল্যায়ন এবং অনুসন্ধান: শিক্ষার্থীদের মৌলিক সমস্যা সমাধান করতে প্রয়োজনীয় শক্তি এবং অনুসন্ধান কৌশল বাড়াতে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

৬.শিক্ষক সমর্থন: শিক্ষকদের শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সাধারণ প্রশাসনিক কাজের সাথে সাথে উপায় সরবরাহ করতে এবং শিক্ষকদের উন্নত শিক্ষার্থীদের জন্য স্বার্থমূলক সময় নির্ধারণ করতে প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক সাপোর্ট সরবরাহ করা হয়।

৭.শিক্ষা শক্তিকে স্থায়ী করা: শিক্ষাক্ষেত্রে সফল প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্য শিক্ষা শক্তির স্থায়িতা এবং তাদের যোগ্যতা বাড়াতে প্রয়োজনীয় স্কিল এবং প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।

৮. ডেটা ব্যবহার: ডেটা বিশ্লেষণ প্রযুক্তি সরবরাহ করে শিক্ষা প্রক্রিয়ার সামগ্রিক উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সরবরাহ করতে সাহায্য করে, এবং প্রশিক্ষণদানে সাপোর্ট দেওয়ার জন্য আপনার শিক্ষার্থীদের সাথে সংক্রান্ত ডেটা সংগ্রহ করে।

৯.শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবসায়িক উদ্যোগ: প্রযুক্তি ব্যবহার করে শিক্ষাক্ষেত্রে ব্যবসায়িক উদ্যোগ চালানো সম্ভব, যেমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক উন্নতি, সংস্থানের ব্যবস্থাপনা, এবং আরও অনেক কিছু।

মোটামুটি, শিক্ষাক্ষেত্রে প্রযুক্তির ব্যবহার শিক্ষা প্রক্রিয়াকে সুগম এবং কর্মশীল করতে সাহায্য করে, এবং শিক্ষার গুণগত উন্নতি সরবরাহ করে।

শিক্ষা বিষয়ক অন্যান্য লিখাঃ https://lifedoze.com//category/শিক্ষা/ 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button