লিডারশীপ স্কিল কি ? কিভাবে লিডারশীপ স্কিল ডেভেলপ করা যায়
যোগ্য দক্ষ এবং প্রভাবশালী একজন নেতা বা লিডার যেকোনো প্রতিষ্ঠানের স্তম্ভ সরূপ। সে জানে কিভাবে কর্মীদের অনুপ্রাণিত করা যায় , তাদেরকে কাজে দক্ষ করা যায় এবং সার্বিক লক্ষ্য বাস্তবায়নে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়া যায়।
নেতৃত্বকে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান তাদের সর্বোচ্চ সাফল্যের পথ হিসেবে বিবেচনা করে। আপনিও যদি নিজেকে সফলতার দ্বার প্রান্তে নিয়ে যেতে চান তাহলে আপনাকে জানতে হবে কিভাবে যোগ্য নেতা হতে হয় এবং নিজের স্কিল ডেভেলপ করতে হয়। এই আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত ভাবে আলোচনা করার চেষ্টা করব, লিডারশীপ স্কিল গুলো আসলে কি কি এবং কিভাবে সেগুলো আপনি অর্জন করবেন।
লিডারশীপ স্কিল কি?
লিডারশীপ স্কিল বা নেতৃত্বের দক্ষতা হল আপনার সেই সমস্ত দক্ষতা, যেগুলোর সাহায্যে আপনি টিমকে কার্যকরভাবে অনুপ্রাণিত ও ক্ষমতায়ন করে তাদেরকে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য পূরণে এগিয়ে নিতে পারবেন। লিডারশীপ স্কিল যেকোনো বিজনেসের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ কারণ সেগুলো আপনার ব্যবসায় সাফল্য বয়ে আনবে। দক্ষ এবং শক্তিশালী নেতা নিশ্চিত করবে কর্মীদের যথাযথ যন্ত্রপাতি এবং কর্মপন্থা দেওয়া হয়েছে কিনা এবং তারা সঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা। একই সাথে প্রতিষ্ঠানের সকল পর্যায়ের সাথে উপযুক্ত যোগাযোগ নিশ্চিত করে সে প্রতিষ্ঠানের আদেশ নির্দেশ এর সমন্বয় সাধন করবে।
এই লিডারশীপ স্কিল শুধু বিজনেস ফিল্ডেই জরুরী এমন কিন্তু নয়, যারা ব্যবসায় না গিয়ে বিভিন্ন চাকরিতে ফোকাস করছেন তাদের জন্যও এই লিডারশীপ স্কিল গুরুত্বপূর্ণ। লিডারশীপ স্কিল আপনার মধ্যে ডেভেলপ হলে আপনি জানতে পারবেন কিভাবে সঠিক ভাবে নিজের দায়িত্ব পালন করা যায়, চমৎকার কমিউনিকেশন এবং কর্মদক্ষতার মাধ্যমে দ্রুত পদোন্নতি লাভ করা যায়। তাছাড়া আপনার সিভিতে লিডারশীপ স্কিল গুলো যুক্ত থাকলে স্বাভাবিকভাবেই সাধারণ প্রতিদ্বন্দ্বীদের চেয়ে আপনি এগিয়ে থাকবেন।
বিভিন্ন লিডারশীপ স্কিলের উদাহরণ
ব্যক্তিগত জীবন, চাকরি এবং ব্যবসায় ক্ষেত্রে যোগ্য এবং দক্ষ নেতা হতে হলে আপনাকে কিছু গুণ বা দক্ষতার অধিকারী হতে হবে। সে সমস্ত দক্ষতা গুলো কেবল মাত্র নেতৃত্ব দানেই কাজে আসবে এমনটি কিন্তু নয় জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই সেই স্কিল বা দক্ষতা গুলো থেকে আপনি উপকার পাবেন।
যোগাযোগ দক্ষতা
একজন যোগ্য নেতার থাকবে দুর্দান্ত এবং চমত্কার কমিউনিকেশন স্কিল। সে জানবে কিভাবে ইফেক্টিভ ভাবে স্টেইক-হোল্ডার, কর্মী এবং টিমের সাথে যোগাযোগ করতে হয়। একই সাথে সে অন্যদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনবে এবং পূর্ণভাবে বিবেচনার পর নিজের মতামত দেবে।
কৌশলগত চিন্তা
একজন নেতা অবশ্যই কৌশলগত চিন্তা শক্তির অধিকারী হবে। সে প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য সম্পর্কে অবগত হয়ে সেই মোতাবেক পরিকল্পনা তৈরি করতে পারবে যা লক্ষ্য অর্জনে কার্যকর ভূমিকা পালন করবে।
কর্মী বা ব্যক্তি ব্যবস্থাপনা
নেতা যেহেতু একটি নির্দিষ্ট দল বা ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে নেতৃত্ব দেবে সুতরাং তার অবশ্যই সে সমস্ত মানুষ গুলো পরিচালনা করার মত যোগ্যতা থাকতে হবে। ব্যক্তি ব্যবস্থাপনা স্কিলের মধ্যে পড়ে, সঠিক ভাবে যোগাযোগ করতে পারা, কর্মীদের কথা মনোযোগ দিয়ে শুনা, দল গঠন, সংঘবদ্ধভাবে কাজ করা, ফিডব্যাক দেয়া এবং দায়িত্ব অর্পণ করা।
আত্মবিশ্বাস ও প্রেরণা
লক্ষ্য অর্জন এবং কর্মীদেরকে কাজের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে নেতাদের অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। আপনি যোগ্য নেতা হতে হলে আপনাকে অবশ্যই আপনার টিমকে অনুপ্রাণিত করতে হবে আপনি তখনি এটা পারবেন যখন নিজের প্রতি নিজে আত্মবিশ্বাসী হবেন।
নমনীয়তা
বিজনেস ফিল্ডে যেকোনো সময় পরিবর্তন আসতে পারে আর এজন্য একজন নেতাকে অবশ্যই নমনীয় হতে হবে। বাজারে পরিবর্তন, কর্মী টার্ন-ওভার, এর মত যেকোনো সমস্যা মোকাবিলা করার মত চিন্তাশক্তি থাকতে হবে। একজন দক্ষ নেতা তার ফ্লেক্সিবিলিটি স্কিলের মাধ্যমে, স্ট্রেটেজিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে বিরূপ পরিস্থিতিতে প্রতিষ্ঠানকে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সাহায্য করবে।
নির্ভরযোগ্যতা
যেহেতু প্রতিষ্ঠান তথা লোকেরা নেতার দিকে তাকিয়ে সেহেতু নেতাকে অবশ্যই নির্ভরযোগ্য হতে হবে। আপনি একজন গ্রহণযোগ্য নেতা হতে হলে এই স্কিলটি আপনার থাকতে হবে। আপনার টিম বিশ্বাস করবে আপনি একজন নির্ভরযোগ্য ব্যক্তি, আপনি যে টুল এবং দিকনির্দেশনা গুলো দিচ্ছেন সেগুলো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কিত আরও অতিরিক্ত কিছু দক্ষতা হল বিশ্বাসযোগ্যতা, সততা, সময়োপযোগীতা এবং উদ্যোগ নেওয়ার ক্ষমতা।
পরামর্শদান এবং শেখানোর ক্ষমতা
একজন নেতার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সে তার টিমের পরামর্শদাতা এবং শিক্ষক হিসেবে কাজ করবে। সে কর্মচারীদের শেখাবে এবং তাদের প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপে সহায়তা করবে। একজন নেতার এই ধরণের সংশ্লিষ্ট দক্ষতার মধ্যে আরও রয়েছে সহায়তা, ইতিবাচক শক্তিবৃদ্ধি প্রদান, কর্মচারীদের পার্থক্য বোঝা এবং গঠনমূলক মতামত প্রদান ইত্যাদি।
সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষমতা
একজন নেতা অবশ্যই আত্মবিশ্বাসের সাথে গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম হতে হবে। যেহেতু তার পরিকল্পনার উপর একটি দল কাজ করবে এবং প্রতিষ্ঠান সামনের দিকে এগিয়ে আসবে সুতরাং সে সুচিন্তিত ভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার ক্ষমতা রাখবে। একজন নেতাকে এই দক্ষতা অর্জনে সাহায্য করে, মোটিভেশন, সমস্যা সমাধান দক্ষতা, কৌশলগত চিন্তাভাবনা এবং যোগাযোগ দক্ষতা।
ফিডব্যাক গ্রহণ এবং প্রদানের ক্ষমতা
লোকেরা যেমন নেতার গাইডেন্সের জন্য অপেক্ষা করে তেমনি তার কাছ থেকে ফিডব্যাকও শুনতে চায়। তাই একজন যোগ্য নেতা কর্মীদের কাজের ব্যাপারে ফিডব্যাক দিবে এবং প্রয়োজনে সংশোধন মূলক দিকনির্দেশনা প্রদান করবে। নেতা সব সময়ের অন্যের কাজের ফিডব্যাকই দেবে না নিজের ব্যাপারে অন্যদের ফিডব্যাক নিতেও প্রস্তুত থাকবে।
উপরে বর্ণীত স্কিল বা দক্ষতা গুলোর মধ্যে লিডারশীপের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুইটি স্কিল হল, কমিউনিকেশন স্কিল এবং পরামর্শদান বা শেখানোর ক্ষমতা।
কর্মীরা ভাল যোগাযোগকে নেতাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হিসেবে স্থান দিয়েছে। যেহেতু আপনাকে কর্মচারীদের সম্পর্কে জানতে, কাজের দায়িত্ব অর্পণ করতে এবং মতামত দিতে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে হবে সুতরাং কার্যকর যোগাযোগ আপনাকে তাদের কাছে স্বচ্ছ রাখবে।
কিভাবে লিডারশীপ স্কিল গুলো ডেভেলপ করা যায়
নিজের মধ্যে এই সমস্ত লিডারশীপ স্কিল গুলোর বিকাশ ঘটানোর অন্যতম সেরা উপায় হল অভিজ্ঞতা অর্জন করা, হোক সেটা চাকরির মাধ্যমে , এক্সটার্নাল এক্টিভিটিতে , অথবা কোন কিছুর নেতৃত্বে থেকে। আসুন এই দক্ষতাগুলো বিকাশের আরও কিছু উপায় দেখে নেয়া যাক,
- নেতৃত্ব নিয়ে বিভিন্ন বই পড়ে, পডকাস্ট শুনে, এবং বিভিন্ন নেতার অতীত ইতিহাস সম্পর্কে জেনে নিজের মধ্যে স্কিল গুলো আনার চেষ্টা করা যেতে পারে।
- বিভিন্ন কোর্স, কর্মশালা এবং প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে লিডারশীপ স্কিল সম্পর্কে ধারণা লাভ করা যায়।
- আপনি যাদেরকে দেখে উৎসাহিত হোন তাদেরকে ফলো করতে পারেন। তাদের প্র্যাকটিস গুলো নিজের মধ্যে আনার চেষ্টা করুন তাদের কৌশল গুলো প্রতিদিন বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রয়োগ করার চেষ্টা করুন।
- আপনার জীবনের সকল ক্ষেত্রে নেতৃত্ব প্রদান করার সুযোগ অনুসন্ধান করুন। যেমন আপনি পরিবার, স্কুল, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় এর মত যেকোনো জায়গায় কোন কাজে আগে এগিয়ে এসে দায়িত্ব নিন।
- স্বীকার করুন এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, নেতারা ক্রমাগত শিখছে তাদের দক্ষতা ডেভেলপ করছে এবং আপনাকেও শিখতে হবে। আপনিও নিয়মিত ভাবে শিখতে থাকুন এবং চর্চা করুন।
লিডারশীপ স্কিল গুলো আরও উন্নত করা
ধরে নিলাম আপনি নিজের লিডারশীপ স্কিলের বিকাশ ঘটিয়ে, কোন প্রতিষ্ঠান বা কোন কাজে লিডারের দায়িত্ব পেয়েছেন। কিন্তু দায়িত্ব পেয়ে যাবার পরেও আপনাকে স্কিল গুলো উন্নত করার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তো কিভাবে আপনার স্কিল গুলো ক্রমাগত উন্নত করে যাবেন সেই বিষয় গুলো দেখে নেয়া যাক।
একজন পরামর্শ দাতা রাখুন
একজন পরামর্শদাতা থাকা মানে আপনি এমন ব্যক্তির কাছ থেকে শিখতে পারছেন যার আপনার চেয়ে বেশি নেতৃত্বের অভিজ্ঞতা রয়েছে। কিছু মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম রয়েছে যেখানে আপনি কর্মক্ষেত্রে একজন নেতার পরামর্শ বা সহায়তা নিতে পারেন এবং তাদের অনুশীলনগুলো পর্যবেক্ষণ করতে পারেন, একই সাথে তাদের টিপস এবং কৌশলগুলি আপনার নিজের দৈনন্দিন জীবনে নিয়ে আসতে পারেন। তাছাড়া একজন পরামর্শদাতা আপনার কর্মক্ষমতা পর্যবেক্ষণ করে কীভাবে উন্নতি করা যায় সে বিষয়ে আপনাকে উপযুক্ত এবং কার্যকরী মতামতও দিতে পারেন।
সুযোগ সন্ধান করুন
আপনি যদি কার্যকরভাবে সুযোগের সন্ধান না করেন তাহলে আপনার পক্ষে দক্ষতা উন্নত করা চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। আপনি নিজের দায়িত্ব গুলোর পাশাপাশি অতিরিক্ত আরও কিছু দায়িত্ব নিতে আগ্রহ প্রকাশ করুন এবং সেগুলো সঠিক ভাবে পালনের ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।
নির্দিষ্ট এরিয়াতে ফোকাস করুন
আপনি আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী নির্দিষ্ট লিডারশীপ স্কিলে ফোকাস করতে পারেন। তাছাড়া এমন কিছু এরিয়া থাকে যেগুলোতে উন্নতি করা জরুরি, আপনার সেই সমস্ত জায়গা গুলো খুঁজে বের করুন এবং সেই সমস্ত দক্ষতা উন্নয়নে পদক্ষেপ নিন।
এক্ষেত্রে একজন মেন্টর বা পরামর্শ দাতা থাকা গুরুত্বপূর্ণ কারণ সে আপনার সমস্ত কার্যকলাপ পর্যবেক্ষণ করে বের করতে পারবে কোন জায়গা গুলোতে আপনি লড়াই করছেন এবং কোন জায়গা গুলোতে ভাল অবস্থানে আছেন।
শেষ কথাঃ
কিছু কিছু মানুষ জন্মগত ভাবে নেতৃত্বের গুণাবলি অর্জন করলেও প্রতিটি মানুষেরই একজন দক্ষ নেতা হবার যোগ্যতা রয়েছে। প্রত্যেকের পক্ষেই একজন যোগ্য নেতা হওয়া সম্ভব। যোগ্য নেতা হতে হলে প্রথমে নিজের মধ্যে নেতৃত্বের গুণাবলি গুলো ডেভেলপ করতে হবে একই সাথে ব্যক্তিগত ও কর্মজীবনে তা প্রয়োগ করতে হবে।
আপনিও যদি উপযুক্ত এবং যোগ্য নেতা হতে চান তাহলে প্রথমে লিডারশীপ স্কিল গুলো সম্পর্কে জানুন, নিজের মধ্যে লিডারশীপ স্কিল গুলো ডেভেলপ করার চেষ্টা করুন। আশা করছি এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আপনি লিডারশীপ স্কিল গুলো সম্পর্কে একটি ভাল ধারণা পাবেন এবং কোন কোন জায়গায় নিজেকে সংশোধন করতে হবে সেটা বুঝতে পারবেন।