কেন কর্মীদের মোটিভেশন প্রদান করা জরুরি ? কিভাবে তাদের মোটিভেট করা যেতে পারে
ওয়ার্ক-প্লেসে কর্মীদের পারফরম্যান্স বাড়াতে Employee Motivation বা কর্মীদের অনুপ্রেরণা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। অধিকাংশ কোম্পানি এর গুরুত্ব অনুধাবন করতে পারে না, তারা জানে না ডেইলি রুটিনে মোটিভেশনকে অন্তর্ভুক্ত করা জরুরী। গবেষণা বলছে, প্রতিষ্ঠান থেকে সক্রিয় বা ভাল কর্মী চলে যাবার কারণ হচ্ছে উপযুক্ত মোটিভেশনের অভাব। গবেষণায় দেখা গেছে বিভিন্ন কোম্পানিতে নিম্নমানের মোটিভেশনের জন্য অধিকাংশ কর্মীই প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করছে, প্রথম থেকে কাজে টিকে আছে এমন কর্মীর সংখ্যা মাত্র ১৩%।
আজকের এই আর্টিকেলে আমরা জানব কেন বিজনেস ফিল্ডে এবং কোম্পানিতে Employee Motivation গুরুত্বপূর্ণ ।
Employee Motivation এর গুরুত্ব
কর্মীদের অনুপ্রেরণা বা মোটিভেশন দেয়া বিভিন্ন কারণেই গুরুত্বপূর্ণ এর মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে কোম্পানির লক্ষ্যে পৌছানো৷ যদি কোন কোম্পানি তার সঠিক লক্ষ্যে পৌছাতে চায় তাহলে তাকে কর্মীদের দিকে নজর দিতে হবে তাদের সুযোগ সুবিধা বুঝতে হবে। কোন কোম্পানিতে Employee Motivation এর অভাব থাকলে ধরে নিতে হবে সেই কোম্পানি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে ৷
যখন কর্মীদের কাজের প্রতি অনুপ্রাণিত করা যাবে তখনই কোম্পানি তার আউটপুট পাবে। গবেষকরা বলছে, যখন কর্মীদের সঠিক ভাবে, হোক সেটা বাহ্যিক বা অন্তর্নিহিত, মোটিভেশন দেয়া হয় তখন তাদের পারফরম্যান্স আগের তুলনায় কয়েক গুন বৃদ্ধি পায়। কর্মীদের জোর করে কাজ করা যাবে না, এতে করে শর্ট-টার্মে কোম্পানি লাভবান হলেও লং-টার্মে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ধরি একজন কর্মীর একটি নির্দিষ্ট কাজ করতে ভাল লাগে না কারণ এতে তার যে সুযোগ সুবিধা পাবার কথা সে পায় না। এখন সেই কর্মী কখনোই মনোযোগ দিয়ে কাজ করবে না, সে অন্য কোম্পানিতে শিফট হবার কথা ভাববে একই সাথে অবহেলা করে কাজ করাতে প্রতিষ্ঠানের রিসোর্স ক্ষতিগ্রস্ত হবে, হয়তোবা প্রোডাক্টের কোয়ালিটি খারাপ হওয়াতে বাজারে প্রতিষ্ঠানের সুনামও নষ্ট হতে পারে।
কর্মীদের অনুপ্রেরণা দানের সুবিধা
যখন কোন কোম্পানি তার কর্মীদের সম্পর্কে জানবে, তাদের চাওয়া পাওয়া পূরণ করবে তাদের উপযুক্ত মোটিভেশন দেবে তখন তারা এখান থেকে একাধিক বেনিফিট পাবে। চলুন, কর্মীদের মোটিভেশন প্রদানের সুবিধা গুলো সম্পর্কে জেনে নেয়া যাক,
কর্মীরা আরও প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হবে
যখন কর্মীরা মোটিভেশন পাবে তখন তারা কাজের প্রতি আরও বেশি যত্নশীল হবে৷ তারা নিজেদেরকে প্রতিষ্ঠানের প্রতি আরও বেশি দায়বদ্ধ ভাববে। কাজ করে আনন্দ পাবে।
কর্মী সন্তুষ্টি অর্জন
সঠিক মোটিভেশনের মাধ্যমে কর্মী সন্তুষ্টি অর্জন করা সম্ভব আর এটা যেকোনো প্রতিষ্ঠানের জন্য বেশ ইতিবাচক দিক। কর্মীরা সন্তুষ্ট থাকলে কাজের প্রতি তাদের আগ্রহ বৃদ্ধি পাবে তারা তাদের সর্বোচ্চটা দিতে চাইবে।
চলমান কর্মী বিকাশ
মোটিভেশনের মাধ্যমে কর্মী কাজের প্রতি যখন আগ্রহী হবে তখন সে চাইবে নিজের সেরাটা কিভাবে দেয়া যায়৷ নিজেকে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে রাখতে কর্মীরা সেলফ ডেভেলপমেন্টে গুরুত্ব দেবে। নতুন কর্ম পদ্ধতি সম্পর্কে জানতে চাইবে নতুন কিছু শিখতে চাইবে। যখন তাদের সামনে প্রত্যাশিত আউটপুট তুলে ধরা হবে তখন তারা নিজেদেরকে সেই লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রস্তুত করবে।
কর্মীদের দক্ষতার উন্নয়ন
কর্মীরা যখন লক্ষ্য অর্জনে তাদের সেলফ ডেভেলপমেন্টে গুরুত্ব দেবে তখন আস্তে আস্তে তাদের কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পাবে। প্রতিষ্ঠান থেকে কাজ দেয়া হলে, তারা পারফরম্যান্স এবং কাজ করার ইচ্ছাকে ব্যালেন্স করে সেরা ফলাফলটি দিতে পারবে। আর কর্মী দক্ষতা বৃদ্ধি পেলে ওভারঅল প্রতিষ্ঠানের ইফিসিয়েন্সি বৃদ্ধি পাবে।
কিভাবে কর্মীদের মোটিভেশন দেয়া যায়
এই পর্যায়ে আমরা জানব কিভাবে কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহী করে তুলা যায় এবং তাদের কোন কোন উপায়ে মোটিভেট করা যেতে পারে।
কমিউনিকেশন বৃদ্ধি করা
কর্মীদের কাজের প্রতি আগ্রহী করে তুলতে ওয়ার্ক-প্লেসে সঠিক যোগাযোগের বিকল্প নেই। কর্মীদের খোজ নিতে হবে তাদের সমস্যা গুলো জানতে হবে, কাজ করতে কি ধরণের অসুবিধা ফেস করছে জানার চেষ্টা করতে হবে। কেবল ফোন বা ইমেইলের মাধ্যমে নির্দেশনা দিলেই হবে না, ইন-পারসন তাদের খোজ নিতে হবে তাদের সাথে কথা বলতে হবে।
প্রতিদিন তাদের খোজ খবর নেয়ার জন্য কিছু সময় নির্ধারণ করা যেতে পারে৷ কফি ব্রেক বা লাঞ্চ টাইমে কর্মীদের সাথে বসা যেতে পারে, এতে করে কর্মীদের সাথে প্রতিষ্ঠানের ভাল সম্পর্ক তৈরি হবে। কর্মীদের বুঝাতে হবে প্রতিষ্ঠানে তাদেরকে দিয়ে শুধু কাজ করা হচ্ছে না, এখানে একটি টিম-ওয়ার্ক হচ্ছে যেখানে সবাই সমান ভাবে সম্মানিত।
কখনো কখনো কর্মীদের মতামতের গুরুত্ব দিতে হবে৷ তাদের কাছ থেকে কোন নির্দিষ্ট বিষয়ের মতামত চাইতে হবে এতে করে কর্মীরা প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যকে নিজেদের লক্ষ্য ভাবতে শুরু করবে। তাছাড়া কর্মীদের পরামর্শে দারুণ কোন আইডিয়াও চলে আসতে পারে কারণ তারা খুব কাছ থেকে কাজ গুলো করে।
স্বতন্ত্র কন্ট্রিবিউশানের মূল্য দেয়া
ম্যানেজমেন্টকে অবশ্যই প্রতিটি কর্মীর অবদানকে মূল্য দিতে হবে। যখন কর্মীরা তাদের কাজের মূল্যায়ন পাবে তখন তারা গর্ব বোধ করবে এবং কাজ করে প্রশান্তি পাবে। ছোট বড় যেকোনো অবদানের মূল্য দেয়া চেষ্টা করুন।
সকল অবদানের জন্য আর্থিক পুরষ্কার দেয়া না গেলেও কর্মীদেরকে ধন্যবাদ দিন, তাদের কাছে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন, এতে ম্যানেজমেন্ট কর্মীদের কাছে ছোট হবে না বরং কর্মীরা আরও বেশি দায়িত্বশীল হয়ে উঠবে।
ইতিবাচক কর্ম পরিবেশ সৃষ্টি
অনেক সময় কর্মীরা ইতিবাচক কর্ম পরিবেশের অভাবে কাজ করার আগ্রহ পায় না। এই ধরণের সমস্যা সমাধানে ম্যানেজমেন্টের উচিত, কর্মীদের ফিডব্যাক নেয়া এবং যেকোনো সমস্যার দ্রুত সমাধান করা।
ইতিবাচক কর্ম পরিবেশ সৃষ্টিতে গ্রাফিক্যাল মেথড ব্যবহার করা যেতে পারে, যেমন অফিসে বা কর্মক্ষেত্রে বিভিন্ন পজিটিভ ছবি বা পোস্টার লাগানো, কফি মগে ইতিবাচক উক্তি প্রিন্ট করে দেয়া ইত্যাদি। কর্মীদের জন্য চমৎকার বিশ্রামের জায়গা, কিছুটা বিনোদনের ব্যবস্থার মাধ্যমেও ইতিবাচক কর্ম পরিবেশ তৈরি হতে পারে।
শেষ কথাঃ
একটি পজিটিভ ওয়ার্ক-প্লেস তৈরি করার মাধ্যমে যেকোনো কোম্পানি অন্য কোম্পানি থেকে, বর্তমান এবং সম্ভাব্য কর্মীদের কাছে বেশি আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে। যদিও এটা সহজ নয়, তবে সময় সাপেক্ষ হলেও ম্যানেজমেন্টের উচিত এই দিকে নজর দেয়া।
সর্বোপরি বলা যায় কর্মীদের কাছ থেকে সেরাটা পেতে এবং যেকোনো কোম্পানির নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌছাতে কর্মীদের সঠিক ভাবে মোটিভেশন দেয়ার বিকল্প নেই।