কত ধরণের Domestic Violence থাকতে পারে ? Domestic Violence এর বিভিন্ন প্রকৃতি
কোন ব্যক্তির পরিবারের সদস্য বা নিকট আত্মীয় কর্তৃক যেকোনো ধরণের সহিংসতার শিকার হওয়াকে বলা হয় ডোমেস্টিক ভায়োলেন্স (Domestic violence)। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নারীরা Domestic violence এর শিকার হলেও কখনো কখনো পুরুষ এবং শিশুরাও এই ধরণের সহিংসতা থেকে রক্ষা পায় না।
এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করার চেষ্টা করব একজন ব্যক্তি কি কি উপায়ে Domestic violence এর শিকার হতে পারেন।
বিভিন্ন ধরণের Domestic Violence
দাম্পত্য জীবনে পুরুষ কর্তৃক নারীরা শারীরিক এবং মানসিক ভাবে নির্যাতনের শিকার হলে সেটিকে যেমন Domestic violence বলা হয় তেমনি এমন আরও অনেক Abuse রয়েছে যা Domestic Abuse এর অন্তর্ভুক্ত।
অনুভুতির অবমাননা বা Emotional Abuse
বিভিন্ন কথায় বা আচরণে পার্টনারের আত্মসম্মানে আঘাত করা, সব সময় অন্যের নিকট পার্টনারকে ছোট করে রাখা একধরণের ভায়োলেন্স। সন্তানদের সাথে সম্পর্ক নষ্ট করার চেষ্টাও Domestic violence এর অন্তর্ভুক্ত। আপনি Emotional abuse এর শিকার হচ্ছেন যখন দেখবেন আপনার স্বামী বা স্ত্রী,
- আপনাকে এমন নাম ধরে ডাকে যেটাতে আপনি লজ্জাবোধ করেন এবং বারবার অপমান করতে চায়।
- আপনাকে বিশ্বাস করতে চায় না এবং আপনার সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়
- আপনাকে পরিবার এবং বন্ধু মহল থেকে বিনা কারণে দূরে রাখতে চায়
- কোথায় যাচ্ছেন কার সাথে কথা বলছেন কতক্ষণ সময় কাটাচ্ছেন ইত্যাদি কোন কারণ ছাড়াই মনিটর করে
- আর্থিক ভাবে সাহায্য করতে না চায়
- যেকোনো কাজে তার পারমিশন চাইবেন বলে আশা করে
মনস্তাত্ত্বিক অবমাননা বা Psychological Abuse
আপনার উপর শারীরিক নির্যাতন বা আপনার শিশু উপর নির্যাতনের ভয় দেখিয়ে যখন আপনার পার্টনার আপনার উপর তার ক্ষমতা বা প্রভাব দেখাতে চাইবে তখন সেটাকে Psychological abuse বলা হয়।
যখন ভিক্টিমের আবেগ নিয়ে এবং তার দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে জোর করে তার দ্বারা কোন কাজ করিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হয় তখন তাকে Psychological abuse বলে। বৈবাহিক সম্পর্কে স্বামীরা যখন তাদের স্ত্রীদের তালাক দেয়ার এবং সন্তানকে আঘাত করার ভয় দেখিয়ে কোন কাজ করাতে চায় তখন সেটিও Domestic violence এর অন্তর্ভুক্ত।
আর্থিক অবমাননা বা Financial Abuse
আর্থিক সম্পদের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ বজায় রেখে, ভিক্টিমকে পারিবারিক অর্থ ব্যবহার থেকে বঞ্চিত করা , স্কুল বা চাকরিতে উপস্থিতি নিষিদ্ধ করাকে Financial Abuse বলা হয়। এই ধরণের আচরণের মাধ্যমে পরিবারে যে আয় করে, সে পার্টনারকে অর্থনৈতিক ভাবে বঞ্চিত করতে চায়।
স্ত্রীকে না জানিয়ে স্বামীর একাধিক গোপনে ব্যাংক একাউন্ট থাকা এবং কোথাও অর্থ ব্যয় করছে এ ব্যাপারে জবাবদিহিতা না করা এক ধরণের Abuse। কখনো স্বামীরা তাদের স্ত্রীদের কাজ করতে নিষেধ করতে পারে অথবা এমন কাজ করতে পারে যাতে স্ত্রীর চাকরী চলে যায়।
একই সাথে পরিবারের প্রয়োজনে অর্থ ব্যয় না করে অপ্রয়োজনীয় জায়গা যেমন, মদ, জুয়া, মাদকে অর্থ ব্যয় করাও Financial Abuse এর অন্তর্ভুক্ত।
শারীরিকভাবে আবমাননা বা Physical Abuse
পার্টনারকে শারীরিক ভাবে যেকোনো আঘাত যেমন, থাপ্পড়, লাথি, চুল ধরে টান দেয়াকে Physical abuse বলা হয়। একই সাথে পার্টনারের চিকিৎসা সেবা অস্বীকার করা এবং জোর করে অ্যালকোহল বা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করানোও Domestic Violence এর অন্তর্ভুক্ত। আপনি Physical abuse এর শিকার হচ্ছেন যখন দেখবেন আপনার স্বামী বা স্ত্রী,
- রাগের মাথায় সম্পত্তি নষ্ট করছে যেমন, দরজায় লাথি মারা, দেয়ালে ঘুষি মারা, ঘরের যেকোনো জিনিস আপনার সামনে ছুড়ে ফেলা ইত্যাদি।
- আপনাকে ভয় দেখানোর জন্য ভয়ানক কোন জায়গায় রেখে আসছে অথবা দরজায় তালা দিয়ে রেখেছে।
- আপনাকে অস্ত্র দেখিয়ে ভয় দেখায়
- বাসা থেকে চলে যেতে বাধ্য করে
- প্রয়োজনে পুলিশ বা মেডিকেল সেবা নিতে বাধা দেয়
- আপনার শিশুদের আঘাত করে
অপ্রত্যাশিত যৌনাচার বা Sexual Abuse
পার্টনারের সম্মতি ব্যতীত তাকে সেক্সুয়াল এক্টিভিটিতে অংশ নিতে বাধ্য করা হচ্ছে Sexual abuse। এই ধরণের আচরণকেও Domestic Violence হিসেবে ধরা হয়। দাম্পত্য জীবনে কোন নারী বা পুরুষ এই ধরণের Sexual Abuse এর শিকার হচ্ছেন বলে বিবেচিত হবেন যদি,
- বাইরের কারো সাথে রিলেশন করে সঙ্গীকে জেলাসি ফিল করানো হয়
- পার্টনারের সম্মতি না থাকা সত্ত্বেও তাকে জোর করে যৌন আবেদনীয় পোশাক পড়তে বাধ্য করানো হয়
- সেক্সুয়ালি বা লজ্জাজনক কোন নামে ডেকে পার্টনারকে অপমান করার চেষ্টা করা হয়
- পার্টনারের সাথে বিকৃত যৌনাচারের চেষ্টা করা এবং বাধ্য করা হয়
- শারীরিক অসুস্থতা থাকা সত্ত্বেও যৌনকর্মে বাধ্য করা হয়
- অতিরিক্ত পর্নোগ্রাফিতে আসক্ত হয়ে পার্টনারকে বিকৃত ভাবে ট্রিট করা হয়
শেষ কথা
Domestic Violence বিষয়টি এমন, যা নির্দিষ্ট কয়েকটি আচরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয় বা একক ভাবে নারী বা পুরুষই কেবল এর শিকার হয় না। উপরে বর্ণিত আচরণ গুলো ছাড়াও আরও অনেক ধরণের আচরণকে Domestic Violence বলা যেতে পারে, যদি সেটি একজন ব্যক্তির স্বাভাবিক জীবন যাত্রা বা মানসিক অবস্থাকে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত করে। পুরুষরাও Domestic Violence এর শিকার হয় বা নিয়মিত হচ্ছে, তবে নারীদের সাথে এই ধরণের আচরণ তুলনামূলক বেশি হয়।
এই ধরণের Domestic Violence এর মত ঘটনার জন্য আমাদের সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অবস্থা অনেকাংশেই দায়ী। যেহেতু আমাদের দেশে নারীরা তুলনামূলক বেশি Domestic Violence এর শিকার হয় সুতরাং বলা যায় যতদিন আমরা আমাদের সংস্কৃতিকে পুরুষ আধিপত্যের নীতি থেকে সুদ্ধ না করতে পারব ততদিন নারীরা এই ধরণের সহিংসতার শিকার হতে থাকবে।